বাকৃবি প্রতিনিধি: বন্যাদুর্গত অঞ্চলে অসুস্থ মানুষ ও প্রাণীদের চিকিৎসায় বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি দল।
এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনের পুনর্বাসনের জন্য বিনামূল্যে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদনশীল ফাওমি এবং আরআইআর জাতের ৩৬০টি মুরগি ৭২ জন অসহায় নারীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিজনকে ৪টি মুরগি এবং ১টি মুরগ দেওয়া হয়।
এই ক্যাম্পেইনে বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের তৃতীয় বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৯ জন শিক্ষার্থী, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৮ জন এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানি শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. ওকাবায়াশি কুনাইকি, কুমিল্লা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. চন্দন কুমার পোদ্দার, অতিরিক্ত জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইসমাইল হোসেন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন মো. লাভলু মিয়া এবং স্থানীয় প্রতিনিধিরা এ উদ্যোগে অংশ নেন।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের তাড়াশাইল স্কুল মাঠে এই ক্যাম্প পরিচালিত হয়।
শিক্ষার্থীরা প্রায় ৩০০ জন খামারির বিনামূল্যে গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ করেন, যাদের মধ্যে কেউ ২ থেকে ১৬টি গবাদিপশু পালন করছেন। এছাড়া ক্যাম্পে প্রায় ১০০টি গরুকে তড়কা রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় এবং ৫০০ জন মানুষকে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা খামারি, মা, শিশু এবং বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শও প্রদান করেন।
সেবা গ্রহণকারী একজন খামারি বলেন, “পানি নেমে যাওয়ার পর আমাদের গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগির চিকিৎসার সংকটের সময় এই সেবা আমাদের অনেক উপকার করেছে। উপজেলা প্রাণী হাসপাতাল দূরে হওয়ায় আমরা সেবা পাচ্ছিলাম না। বাড়ির পাশে ওষুধ ও চিকিৎসা পেয়ে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি। বর্তমানে একটি প্রাণীর চিকিৎসার জন্য প্রায় হাজার টাকা লাগে, যা একজন সাধারণ কৃষকের পক্ষে বহন করা কঠিন। সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় গবাদিপশু মারা যায়।”
এই বিনামূল্যের ক্যাম্প পরিচালিত হয় মেড কোয়ালিশন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল ফ্রেন্ডশিপ কর্পোরেশন এবং ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইআরডিএস)-এর আর্থিক সহযোগিতায়। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের মাঝে মুরগি বিতরণ করা হয়।
ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, “বন্যা পরবর্তী সময়ে এই অঞ্চলের ক্ষতি মোকাবেলায় এটি একটি মহতী উদ্যোগ। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বন্যা কবলিত মানুষের পুনর্বাসন সম্ভব হবে। বন্যার সময় বিভিন্ন রোগ গবাদিপশু ও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেগুলো প্রতিরোধে ভ্যাকসিন কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। যারা এই উদ্যোগে যুক্ত তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”
পুনর্বাসন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মাশশারাত মালিহা বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজনের লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য মুরগি বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছি। এই উদ্যোগে বাকৃবির ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং তাদের সন্তানদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা পেয়েছি। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের উদ্যোগ খুব সামান্য, আমরা চাই এই ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। যেকোনো দুর্যোগে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও যেন সেবা পায়, তা নিশ্চিত হোক। খামারিরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, এজন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের কাছে এককালীন বা দীর্ঘমেয়াদি অনুদান প্রদানের প্রস্তাব করছি।”
ক্যাম্প সম্পর্কে অধ্যাপক ওকাবায়াশি কুনাইকি বলেন, “আমি প্রথমবারের মতো বন্যায় অসুস্থ মানুষ ও প্রাণীর চিকিৎসা এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যন্ত লোকদের পুনর্বাসনে অংশ নিয়েছি। দলে দলে মানুষ ও প্রাণী চিকিৎসা নিতে আসছেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা দেখে আমি অভিভূত।”
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তার বৃষ্টি জানান, “আমাদের অনেক আগে থেকেই এই ধরনের পরিকল্পনা ছিল। সকাল থেকে আমরা গ্রামের লোকদের রোগের উপর ভিত্তি করে নানা ধরনের ওষুধ বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছি।”
জানা যায়, এর আগে শিক্ষার্থীরা শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার শংকরঘোষ গ্রামে একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন, যেখানে ৩০০ জন খামারিকে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, ১০০টি গরুর তড়কা ও বাদলা ভ্যাকসিন এবং ৫০টি ছাগলের পিপিআর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
এসএস/
মন্তব্য করুন