ইবি প্রতিনিধি: ইসলালামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে অপসারণের দাবিতে প্রধান ফটক আটকে আন্দোলন করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (০৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি নিয়ে প্রধান ফটক চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ গামী বাস আটকে প্রতিবাদ করেন।
পরে ঘটনাস্থলে প্রক্টর ড. শাহীনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর ড. আব্দুল বারী ও ড. খাইরুল ইসলামের আশ্বাসে উপাচার্যের সাথে আলোচনায় বসে শিক্ষার্থীরা। পরে সেখানে তারা উপচার্যের নিকট অভিযোগ গুলো উত্থাপন করেন।
বিক্ষোভ মিছিলে ‘হাফিজের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘দফা এক দাবি এক, হাফিজের পদত্যাগ’, ‘হাফিজের দুই গালে,জুতা মারো তালে তালে’, ‘সমকামী শিক্ষক, চাই না চাই না’ সহ বিভিন্ন মিছিল দেয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জুলাই আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করায় ইনবক্সে হুমকি, ছাত্রলীগের দোসর হিসেবে আন্দোলনের পরে ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন, এটেনডেন্সের বিনিময়ে ছাত্রলীগের মিছিলে পাঠানো, শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা। কথার অবাধ্য হলে ইন্টারনাল মার্কস কমিয়ে দেওয়া। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ক্লাসের সামনে কিংবা সবার সামনে হেনস্থা করে। শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি করা। শিক্ষার্থীদের ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে মারার হুমকি কিংবা ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা। ব্যক্তিগত রুমে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা। দাড়ি থাকলে শিবির ট্যাগ দিয়ে তাকে হেনস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের পারসোনাল সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ আলোচনা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে ব্ল্যাকমেইল করে তার স্ক্রিনশট নিয়ে তার অপছন্দনীয় শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করা। শিক্ষার্থীদের বাবা-মা এবং তাদের রক্তে সমস্যা বলে গালমন্দ করা। ধর্মভেদে ছুটি নির্ধারণ করা। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যেদিন উপস্থিতি কম থাকে, সেদিন টিউটোরিয়াল কিংবা ক্লাস টেস্ট নেওয়া এবং যারা অনঃপস্থিত তাদেরকে তার(হাফিজ) রুমে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করা। ডিপার্টমেন্টে উপজাতি বন্ধুদের সাথে মিলামেশা করলে, তারা পাহাড়ি তারা মানুষ মারে বলে তাদের সাথে মিশতে বাধা দেওয়া। একজন শিক্ষার্থীকে থ্রেট দিয়ে অন্য শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় জোরপূর্বক জিডি করানো এবং এ বিষয় উভয়পক্ষকে হেনস্থা করা। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য রেজাল্ট খারাপ করে দেওয়া। ডিপার্টমেন্ট তিনি একাই চালান এবং অন্যান্য শিক্ষকদের শরণাপন্ন হতে না দেওয়া। অন্যান্য শিক্ষকদের নাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে অপমান, অপদস্থ এবং চাপ দেওয়া। শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের দোসর দিয়ে জোরপূর্বক হল থেকে নামিয়ে দেওয়া। শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মেয়েদের শ্রেণিকক্ষে সকলের সামনে জামা কাপড় নিয়ে কথা বলা, নর্তকী, বাজারের মেয়ে, খানকি মাগি ইত্যাদি ইত্যাদি বলে গালিগালাজ করা। মেয়ে শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া স্টক করে তাদের পোস্ট করা ছবি নিয়ে কাস্টমার ধরার ধান্দা এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা বলা, এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা ফেইসবুকে কি পোস্ট করবে তা নির্ধারণ করা। ক্লাসের শিডিউল দিয়ে ডেকে এনে জোরপূর্বক তার জন্মদিন পালন করানো এবং যারা অনুপস্থিত তাদের হেনস্থা করা। ১৭-১৮ সেশনের এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ক্লাসে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে আরেক জুনিয়রের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। ১৭-১৮ সেশনের এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ক্লাসের সকলের সামনে পতিতা বলা। ১৮-১৯ সেশনের এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে ক্লাসের সবার সামনে সে বাজারে ব্যবসা করে খায় বলে হেনস্থা করা। যারা কুষ্টিয়া শহরে থাকে তাদেরকে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২/১টা পর্যন্ত অকারণে তার সাথে ঘুরতে বাধ্য করা এবং যদি কোন শিক্ষার্থী ঘুরতে যেতে নাকোচ করলে পরদিন ক্লাস থেকে তাকে বের করে দেওয়া এবং এসবের প্রভাব পরিক্ষার খাতায় পড়া। তার পছন্দের শিক্ষার্থীদেরকে পরিক্ষা এবং ভাইভা পরিক্ষায় পছন্দসই নাম্বার দিতেই এবং যেসব শিক্ষার্থীদের তার পছন্দ না তাদের পরিক্ষা এবং ভাইভা পরিক্ষায় কম নম্বর দিয়ে উনার একাডেমিক ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন।
এ বিষয়ে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী লামিয়া হোসেন জানান, ‘আমি প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকতাম। আমি কি পোশাক পড়বো, কোথায় যাবো, কি খাবো, সেই স্বাধীনতাটুকু তিনি কেড়ে নিয়েছিলেন। দুইদিন বিভাগে না যাওয়ায় আমাকে ফ্যানে ঝুলিয়ে পিটাতে চেয়েছেন। বিভাগের মেয়েদের ওপেনে গালিগালাজ করেন। মেয়েদের মাগি বলেও সম্বোধন করেন।’
বিভাগটির আরেক শিক্ষার্থী হৃদয় বলেন, ‘একজন শিক্ষক কখনো অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে মেন্টালি অ্যাটাক করতে পারেনা না। কিন্তু তিনি সকল শিক্ষার্থীর সাথে, কোথায় থাকবো, কোথায় আড্ডা দেবো, কোন হলে থাকবো, এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেন।’
এদিকে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলাম কে একাধিক বার ফোন করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, তোমাদের সকল অভিযোগ লিখিতভাবে দাও। আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। জুলাই আন্দোলনের পর অভিযোগ দেওয়া জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে দাবি আদায়ে অন্যের অসুবিধা যেন না হয়। এজন্য গাড়ি আটকিয়ে আন্দোলন না করার অনুরোধ রইলো।
এসএস/
মন্তব্য করুন