কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি:
সুপার সানডে ঘোষণা দিয়ে ড.মাহবুব রহমান মোল্লা কলেজ (ডিএমআরসি), দনিয়া কলেজ , আইডিয়াল কলেজ,সিটি কলেজ, নটরডেম কলেজ সহ ৩৭ টি কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে সরকারি কবি নজরুল এবং শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা চালিয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করে এবং লুটপাট-ভাঙচুর করে।
রবিবার( ২৪ নভেম্বর) দুপুর থেকে যেন রণক্ষেত্রে পরিনত হয় পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকা । ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে এসময় ডিএমআরসি, দনিয়া কলেজ , আইডিয়াল কলেজ,সিটি কলেজ, নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদল ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা যায়। হাজার শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ করতে না পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনী টিয়ারশেল ছুড়ে কিন্তু প্রায় হাজার শিক্ষার্থীদের পিছু না হটে পরীক্ষা চলাকালীন সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দিকে এগিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের উপর আক্রমণ করলে তারাও পালটা আক্রমণ করে।
তবে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা কর্মীদের মানবিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচারণ ও গতকাল রাতের বৈঠকের কারণে তারা কবি নজরুল সরকারি কলেজে কোন ধরনের ভাঙচুর বা হামলা চালায় নি বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় ড.মাহবুব রহমান মোল্লা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী সাওয়াদ হোসেন বলেন, আমরা বিচার চাইতে এসেছিলাম আমাদের সহপাঠীর হত্যার আর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ প্রশাসন, পুলিশ, ছাত্রদলের নেতারা আমাদের উপর হামলা করল। তারা আমাদের রায় সাহেব মোড়ে থেকে পিটিয়ে পিটিয়ে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত নিয়ে গেছে। আমরা সেই হামলা ও আমাদের সহপাঠীর হত্যার বিচার চাইতে এসেছিলাম আজ। কিন্তু আজও আমাদের উপর হামলা করছে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের লোকজন।
গত ১৮ নভেম্বর ন্যাশনাল হাসপাতালে ডিএমআরসি এর এক শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করলে তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখালে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর শিক্ষার্থীরা। এ সময় কবি নজরুল এবং সোহরাওয়ার্দীর ছাত্রদল পরিচয়ধারী ও পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
পরবর্তীতে গত বুধবার (২০ নভেম্বর ) অভিজিৎ রায় এর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অবরোধ করলে পুলিশ ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ করে। এসময় কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদল, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদল, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল এবং বিএনপির আরও অঙ্গ সংগঠন মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের দমন করতে তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। ওই হামলায় প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর ) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গত (১৮ নভেম্বর) এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট এর দিকে যাচ্ছিলেন। এরই মাঝে শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকায় আসলে কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদল, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদল, সূত্রাপুর থানা ছাত্রদল এবং বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংঠন মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দমন করতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উপর প্রথমে লাঠিচার্জ করে এবং শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপর শিক্ষার্থীদেরকে রায় সাহেব মোড় থেকে মুরগীটোলা হয়ে দয়াগঞ্জ এর দিকে ধাওয়া করে। ছাত্রদলের এই অতর্কিত হামলায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং শিক্ষার্থী ছাড়াও দুইজন গণমাধ্যম কর্মীকে সংবাদ সংগ্রহ করা অবস্থায় কয়েকদফা পিটুনি দেওয়া হয় এবং তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এবিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইরফান আহমেদ ফাহিম বলেন,আমরা ড.মাহবুব রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তারা আমাদের শিক্ষার্থী ও কলেজ অবকাঠামোর উপর হামলা চালালো এর বিচার হওয়া দরকার। এবিষয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল সর্বদা একাত্মতা পোষণ করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করলে তা কখনোই ছাত্রদল মেনে নেবে না।
অনেকটা আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে শহিদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, পুলিশকে ফোন করেছি, সেনাবাহিনীকে ফোন করেছি, কেউই এগিয়ে আসেনি। আমি ঘটনা ঘটার সময় পুরো সময় ক্যাম্পাসে আটকে ছিলাম। তবে যেটুকু অনুমান করছি কলেজের বেশিরভাগ কম্পিউটারগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো কলেজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
কবি নজরুল সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ মো.হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তারা পাল্টা আক্রমণে যাননি। তাছাড়া সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের পরীক্ষা চলমান ছিল। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি যেন কোনো পরীক্ষার্থী আহত না হন। তারা যেন সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, কেউ কোনো গ্রুপে উসকানিমূলক কিছু লিখবেন না এবং শান্ত থাকবেন।
হামলা থামানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন কলেজ ভাঙচুর করা হয় তখন আমি তাদের বলেছি, যদি কোনো ব্যক্তি বিশেষ অপরাধ করে থাকে সে বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কলেজ একটি পবিত্র জায়গা। এটি ভাঙচুর করা ঠিক নয়। সে সময় যারা ছাত্র ছিলেন তারা এ ব্যাপারে সাড়া দিয়েছেন (হামলা থেকে সরে গিয়েছেন)।
গতকাল মধ্যরাতে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ভাঙচুরের প্রতিবাদে সোমবারকে ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করেছেন এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
রোববারের ঘটনার জবাব দিতে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় কলেজের প্রধান ফটকের সামনে সকল শিক্ষার্থীকে জড়ো হওয়ার জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মন্তব্য করুন