জাবি প্রতিনিধি: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আবারও রাস্তায় নেমেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
সোমবার (১জুলাই) বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রায় ২০ মিনিট অবরোধ করে পুনরায় শহীদ মিনারের সামনে এসে মিছিল শেষ করেন।
এ সময় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। ‘জ্বালরে জালো, আগুন জ্বালো’ ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো, কোটাপদ্ধতি বাতিল করো’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বাতিল চাই বাতিল চাই, কোটা প্রথা বাতিল চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ‘১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসা, সরকারি চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া, এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, আজকের এই জনসমাবেশ প্রমাণ করে কোটর বিরুদ্ধে ছাত্র সমাবেশ সরব রয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে কোনো ক্ষেত্রেই ফ্যাসিস্টরা ছাত্র-সমাজের সাথে টিকে উঠতে পারেনি; বর্তমান সরকারও ১৮’র পরিপত্র পুনর্বহাল না করে পারবে না। আমরা দাবি আদায় হওয়া পর্যন্ত আমাদের সর্বোচ্চ সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিলে রাস্ত-ঘাট অচল করে দিবো। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সন্তানের পিছিয়ে পড়া হিসেবে প্রমাণ করার জন্য সংগ্রাম করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, যারা কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা নাকি সরকার-বিরোধী, তারা নাকি জামাত-শিবির! তাহলে পেনশন স্কিম নিয়ে যে আন্দোলন চলছে এটা কেন সরকারবিরোধী হবে না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কুরআন থেকে যে দলিল পেশ করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে, সেখানে তিনি বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধায় বিজয়ীরা দেশের ৮০ ভাগ সুযোগ সুবিধা পাবেন। তাহলে আমার প্রশ্ন ১৯৭১ সালে কি সাধারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেনি??
তিনি আরো বলেন, একাত্তরে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম দেশের বৈষম্য দূর করার জন্য। কিন্তু আজ স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বৈষম্যকেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আমরা মনে করছি এই বৈষম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে, অবমাননা করা হচ্ছে। এ ছাত্রসমাজ আজ এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
এসআই/
মন্তব্য করুন