শাকিল শাহরিয়ার: ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৬৯ বছর বয়সী সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। দ্বিতীয় দফায় অনুষ্ঠিত ভোটে কট্টরপন্থী সাইদ জালিলিকে হারিয়েছেন তিনি। ইরানের পার্লামেন্টে ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। ইরানের প্রধান সংস্কারপন্থী জোট তাকে সমর্থন দিয়েছে। সাবেক দুই সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি। ইরানের নবম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন দেশটির সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাসুদ পেজেশকিয়ান। শুক্রবার অনুষ্ঠিত ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বের ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন সংস্কারপন্থী পেজেশকিয়ান।
মাসুদ পেজেশকিয়ান পশ্চিম আজারবাইজানের মাহাবাদে ২৯ শে সেপ্টেম্বর ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পেজেশকিয়ানের পিতা ছিলেন একজন ইরানী আজারবাইজানীয় যিনি কাসর-ই শিরিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং পেজেশকিয়ানের মা ছিলেন একজন ইরানী কুর্দি। পেজেশকিয়ান ফার্সি ছাড়াও আজারবাইজানি এবং কুর্দি উভয় ভাষাতেই সাবলীল ছিলেন।
১৯৭৩ সালে তিনি ডিপ্লোমা শেষ করেন এবং তার দায়িত্ব পালনের জন্য জাবোলে চলে যান। এই সময়েই তিনি ওষুধের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার চাকরি শেষ করার পর, তিনি তার নিজ প্রদেশে ফিরে আসেন, যেখানে তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন এবং সাধারণ চিকিৎসায় স্নাতক অর্জন করেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় পেজেশকিয়ান প্রায়শই সামনের সারিতে যেতেন, যেখানে তিনি মেডিকেল টিম পাঠানো এবং একজন যোদ্ধা এবং ডাক্তার হিসাবে কাজ করার জন্য দায়িত্বে ছিলেন। পেজেশকিয়ান ১৯৮৫ সালে তার জেনারেল প্র্যাকটিশনার কোর্স শেষ করেন এবং মেডিকেল কলেজে ফিজিওলজি পড়া শুরু করেন।
যুদ্ধের পর, তিনি তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে সাধারণ অস্ত্রোপচারে পড়াশোনা করে তার শিক্ষা চালিয়ে যান । ১৯৯৩ সালে, তিনি ইরান ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস থেকে কার্ডিয়াক সার্জারিতে একটি উপ-স্পেশালিটি পান । পরবর্তীতে তিনি হার্ট সার্জারির একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন, যার ফলে তিনি ১৯৯৪ সালে তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর প্রেসিডেন্ট হন, এই পদে তিনি পাঁচ বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন।
পেজেশকিয়ানের স্ত্রী একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৯৩ সালে, তিনি একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তার সন্তানদের সাথে মারা যান। তিনি তার বাকী দুই ছেলে ও মেয়েকে একা বড় করেছেন এবং আর কখনো বিয়ে করেননি। তার মেয়ে জাহরা শরীফ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং রুহানি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে তিনি জ্যাম পেট্রোকেমিক্যালে কর্মরত ছিলেন ।
পেজেশকিয়ানের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় যখন তিনি ১৯৯৭ সালে মোহাম্মদ খাতামির প্রশাসনে উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি চার বছর পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন, ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন । তাব্রিজ, এবং ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টের প্রথম ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৬ জুলাই ২০২৪ এ, পেজেশকিয়ান ৫ জুলাই ২০২৪ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সাঈদ জালিলির ১৩.৫ মিলিয়ন (৪৪.৩%) থেকে ১৬.৩ মিলিয়ন (৫৩.৭%) ভোটে জয়ী হওয়ার পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
এর আগে ২০১৩ ও ২০২১ সালেও পেজেশকিয়ান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।
ইরানের ক্ষমতা বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলদের হাতে রয়েছে। তবে পেজেশকিয়ান মনোনয়ন পাওয়ায় সংস্কারপন্থিরা আশার আলো দেখছেন। নির্বাচনেও তার ফলাফলি প্রতিফলিত হয়েছে।
ইরানের লাখ লাখ মানুষের সামাজিক স্বাধীনতা থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নানা ধরনের প্রত্যাশার কেন্দ্রে আছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। বিশ্লেষকদের ধারণা পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের তীব্র টানাপোড়েনে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে বের করবেন পেজেশকিয়ান। তিনি ইরানকে বাস্তবধর্মী পররাষ্ট্রনীতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
এসআই/
মন্তব্য করুন