ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাঁর সরকারের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক এমপিরা এবং পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আত্মগোপনে রয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে, তাঁদের কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের চার নেতা ও সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয় গতকাল শুক্রবার।
সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে কয়েকজন আছেন বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। ঢাকা মহানগর পুলিশসহ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাবেক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং প্রশাসনের প্রতাপশালী সাবেক কর্মকর্তাদের অন্তত ৫০ জনকে নিরাপত্তার কারণে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গত জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় আসামি হিসেবে তাঁদের অনেকে রয়েছেন। মামলা হলে নজরদারিতে থাকা ওই ব্যক্তিদের একেক করে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
এ ব্যাপারে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘যাঁদের অপরাধে সম্পৃক্ততা আছে এবং আত্মগোপনে আছেন, তাঁদের আমরা হন্যে হয়ে খুঁজছি। তাঁদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, দলীয় এমপি ও নেতারা আত্মগোপন করেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও আত্মগোপন করেন। একাধিক সাবেক মন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে ৭ আগস্ট বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়। পরে তাঁদের নিয়ে যায় শৃঙ্খলা বাহিনী। বুধবার রাতে এ দুজনকে ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁদের তিনজনকে আদালতে হাজির করে পল্টনে রিকশাচালক কামাল মিয়া হত্যা মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়। বুধবার তাঁদের আদালতে পাঠিয়ে নিউমার্কেট এলাকায় শাহজাহান হত্যা মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ডে নেয় নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। পুলিশ বলেছে, রিমান্ডে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে খিলক্ষেত থেকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল তাঁকে ওই মামলায় আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তিনি কয়েক দিন হেফাজতে থাকার কথা জানিয়েছেন।
জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া নিয়ে ডিএমপি বলেছে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান সেনাবাহিনীর আশ্রয় নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে সেনাসদস্যরা তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার অন্যরাও শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। ৭ আগস্ট পলকের কিছু সময় পরই বিমানবন্দরে আটক হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তাঁকে বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রামের সাবেক এমপি এম এ লতিফ বিএনপির নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়লে তাঁকেও হেফাজতে নেয় সেনাবাহিনী। চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজকেও আটকের খবর প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম। তাঁকেও সেনাবাহিনীর হেফাজতে দেওয়া হয়।
রাজশাহী সেনানিবাসে মঙ্গলবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, তাঁদের আশ্রয়ে বেশ কয়েকজন রয়েছেন। তাঁদের জীবনের যে হুমকি আছে, সে জন্য আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, তবে অবশ্যই তাঁরা শাস্তির আওতায় যাবেন।
বাংলাদেশ পুলিশের এক বার্তায় জানানো হয়, ‘প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন হাই প্রোফাইল ব্যক্তি, যেমন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন না করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’
পুলিশের সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরে আটকে পড়েন সাবেক আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। পরে পুলিশ হেলিকপ্টারে করে তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তাঁদের প্রত্যেকের নামে ইতিমধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে।
(দৈনিক আজকের পত্রিকা’র রিপোর্ট)
এসআই/
মন্তব্য করুন