এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই। যারা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তাণ্ডবে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা এবং দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন জামায়াতের আমির।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে একটা জাহান্নামে পরিণত করেছিল। সেই আওয়ামী লীগ এখন মাথা উঁচু করার চেষ্টা করে। ১৯৯৬ সালে অতীতের অপরাধের জন্য তারা হাতজোড় করে বিনা শর্তে মাফ চেয়ে বলেছিল, আমাদের একবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ দিয়ে দেশপ্রেম প্রকাশের সুযোগ দিন। জনগণ তাদের সে সুযোগ দিয়েছিল, সেবার ক্ষমতায় এসে তারা কাড়ি কাড়ি লাশ ও রক্ত উপহার দিয়েছিল। তাদের দলীয় প্রধান বলেছিলেন, কেউ যদি তাদের দলের একটা লাশ ফেলে, তাহলে তারা ১০টা লাশ ফেলবেন। এবার বলেনি কিন্তু করেছেন। জাতির ওপর রাগ মেটাতে নিরীহ মানুষদের হত্যার পর তাদের লাশ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন। তারা নাকি আবার এদেশে রাজনীতির ও নির্বাচন করতে চায়। যারা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে তারা নির্বাচনে ভোট চাইবে কার কাছে? তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
ভালো মানুষ পালায় না উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, দৃশ্যত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তাদের কর্মফল পেয়েছেন। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তার সঙ্গী-সাথীরা পালানোর চেষ্টায় আছেন। কেউ চুরি করে পালিয়েছেন, কেউ পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। একজন মানুষ হিসেবে এর থেকে মৃত্যু তাদের জন্য শ্রেয় ছিল। কোনো রাজনীতিবিদের জন্য পালানো মানায় না। রাজনীতি করবেন রাজকীয় মন নিয়ে, দেশের জন্য। রাজকীয় মন ও দেশের জন্য রাজনীতি করলে আপনাকে পালাতে হবে কেন? চোর-ডাকাত, খুনি, লুটেরা, ধর্ষক, গুমকারী পালায়। কোনো ভালো মানুষ পালায় না।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, তাদের অন্যায়ের বিচারের রায় তারাই তাদের দিয়েছেন। এখন বাকিটা দেখার জন্য জাতি উন্মুখ হয়ে আছে। আমরা জানি এই সরকার সকল বিচার সম্পন্ন করতে পারবে না। কিন্তু ফ্যাসিস্টদের বিচার তাদের শুরু করতে হবে। আর এই শুরু হবে ২৮ অক্টোবরের নির্মম হত্যার বিচারের মাধ্যমে। যেদিন লগি-বৈঠার তাণ্ডবে রাজনীতি তার পথ হারিয়েছিল। এদিন মানবতার মৃত্যু হয়েছিল।
জামায়াত আমির আরও বলেন, বিগত সরকার আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মামলা করেছিল। মিথ্যা আদালত ও পাতানো বিচারের মাধ্যমে তাদের খুন করেছে। যা মানুষ দেখেনি, এমন কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিচার করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ এই নিকৃষ্ট দলটির শত মানুষকে ধর্ষণের পর সেঞ্চুরি উদযাপন করতে দেখেছে। ঢাকার বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের মেয়েদের জানোয়ারের হাতে তুলে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের লম্পট নেতাকর্মী ও মন্ত্রীদের কুৎসিত লাম্পট্যের ইতিহাস হাজারও ভয়ের মধ্যেও সাংবাদিক ভাইয়েরা কিছু হলেও তুলে এনেছে। আজকে তাদের পাওনা তাদের পেতে হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করে জামায়াত আমির বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতা কি চায় তা বুঝে রাজনীতি করতে হবে। আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। জাতীয় জীবনে সংকট ও স্বার্থের ব্যাপারে কোনো বিভিক্তি হোক তা আমরা চাই না। মৌলিক সব বিষয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বাংলাদেশে ফ্যাসিজমের জায়গা নেই।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে জামায়াতের ১৪ নেতাকর্মীকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ ১৮ বছর পর তার প্রতিবাদে সমাবেশ করল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আয়োজনে ওই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন বিএনপিসহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।
এসএস/
মন্তব্য করুন