ডয়েচে ভেলে বাংলা: এখন পর্যন্ত কর্মপদ্ধতি ঠিক না হলেও বৃহৎ পরিসরেই কাজ করবে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’৷ আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কর্মপদ্ধতি ঠিক করবেন কমিশন সংশ্লিষ্টরা৷
জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খুব শিগগিরই সবাই মিলে বসে কিভাবে কাজ করা হবে সেটা ঠিক হবে৷ তবে এই ধরনের কমিশনের পক্ষে কী করা সম্ভব? একটা দিন, তারিখ ঠিক করে আমরা হয়ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির অডিটোরিয়ামে সবাইকে আসার আহবান জানালাম৷ সেখানে ভিকটিম ছাড়াও তাদের স্বজনরা এসে তাদের বক্তব্য দেবেন৷ সেখানে হয়ত একজন ব্যবসায়ী এসে বললেন, তার দোকান কারা ভেঙেছে, কিভাবে ভেঙেছে৷ সেগুলো আমরা লিপিবদ্ধ করবো৷ এভাবে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যসহ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তগুলো নিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করা হবে৷ সরকার যদি কমিশনের কাজে বাধা দেয়, তাহলে কাজের পরিসর হয়ত একটু ছোট হতে পারে, তবে উদ্দেশ্য ঠিক থাকবে।’
কোটা আন্দোলন ঘিরে বিপুল প্রাণহানি, শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেপ্তারসহ নানা সহিংস ঘটনায় সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছে৷ গত সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় কমিশনের পক্ষে এই তথ্য জানানো হয়৷ বার্তাটি পাঠিয়েছেন গণতদন্ত কমিশনের যুগ্ম সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান ও মাহা মির্জা৷
কমিশনের সদস্যরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান, অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, আইনজীবী অনীক আর হক, অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা৷ কমিশনের যুগ্ম সভাপতি হবেন বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন ও সুলতানা কামাল৷ আর সদস্যসচিব হিসেবে যৌথভাবে কাজ করবেন অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান ও মাহা মির্জা৷
এ ছাড়াও এই গণতদন্ত কমিশনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন সিনিয়র আইনজীবী তোবারক হোসেন, সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেন, আইনজীবী ও শিক্ষক ড. শাহদীন মালিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ্ খান, শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপন, আইনজীবী রাশনা ইমাম, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার৷
এই কমিশন কীভাবে কাজ করবে, কমিশন তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করবে কীভাবে, এটা কি জাহানারা ইমামের গণআদালতের মতো প্রতীকী, নাকি আরো বড় পরিসরে কাজ করবে- এসব প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. তানজিমউদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা যে প্রতীকী হবে না, সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়৷ বৃহৎ পরিসরেই কাজ করবে এই কমিশন৷ তবে কিভাবে কাজ হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না, বা বলতে চাচ্ছি না৷ খুব শিগগিরই আমরা সবাই একসঙ্গে বসবো৷ সেখানেই আপনার প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা হবে৷ আপাতত আমরা সবার কাছে অডিও, ভিডিও, ফটোগ্রাফ ও লেখাসহ সব ধরনের তথ্য চেয়েছি৷ এই কমিশনের পরিসর আরো বাড়তে পারে৷ সবার মতামত নিয়েই এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।’
কমিশনের পক্ষে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে সহিংসতার সূত্রপাত হয়৷ এই সহিংসতার প্রতিবাদে বাংলাদেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এলে রংপুরে আবু সাঈদকে সরাসরি বুকে গুলি করা হয়৷ কিন্তু পুলিশ যখন মামলা দায়ের করে, তখন সাধারণ ছাত্র ও জনগণকে দায়ী করা হয়৷ এতে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে এবং এইসব ঘটনায় সত্য উদঘাটনের দাবি উঠেছে৷ এ ঘটনায় পত্রিকার হিসাবে অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হলেও সরকারি হিসেবে তা ১৪৭ জন।’
কমিশন মনে করে, ‘ওই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেপ্তারসহ নানা সহিংস উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং তাতে সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে৷ তাই এসব ঘটনার কারণ উদঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আবশ্যকতা রয়েছে৷ এরই অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি জাতীয় গণতদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।’
জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে সব সচেতন ব্যক্তিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১ জুলাই থেকে সংগঠিত বিভিন্ন সহিংস নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুলিবর্ষণ, হুমকি, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে পাঠানোর জন্য শিগগিরই অনুরোধ জানানো হবে৷
এসআই/
মন্তব্য করুন