বাংলাদেশের সঙ্গে একটি নতুন অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্থগিত করছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম দফার এই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির আলোকে আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে বলে ইইউর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওই মুখপাত্র ই-মেইলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আলোচনার জন্য নতুন কোনো তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণ ও বিকাশের লক্ষ্যে গত বছরের ২৫ অক্টোবর নতুন ইইউ–বাংলাদেশ অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন উপস্থিত ছিলেন।
ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে ৪০ কোটি ইউরো অর্থায়নের লক্ষ্যে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসের লক্ষ্যসমূহ অর্জন ও দেশের বিদ্যুৎ খাতের পরিবেশসম্মত টেকসই রূপান্তরের জন্য এই অর্থ খরচ করার কথা।
এ ছাড়া আরও পাঁচটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাবদ সাত কোটি ইউরোর চুক্তিও সই করা হয়। এ পাঁচটি ক্ষেত্র হলো শিক্ষা, শোভন কাজ, পরিবেশসম্মত নির্মাণশিল্প, ই–গভর্ন্যান্স ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা রোধ।
নতুন অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম দফার আলোচনা স্থগিত করার এ সিদ্ধান্ত এসেছে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটা সহিংস ঘটনার প্রতি ইইউর সাড়া হিসেবে। ইইউর মুখপাত্র বলেছেন, ‘বিরাজমান পরিস্থিতির আলোকে’ আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের চলতি ঘটনাবলি ও এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান সম্পর্কে ওই মুখপাত্র বলেন যে সংস্থাটির বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এ বিষয়ে গতকাল একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
ওই বিবৃতিতে জোসেপ বোরেল বলেন, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, ২৭ জুলাই লাওসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের আঞ্চলিক ফোরামের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
ইইউর বৈদেশিক নীতিবিষয়ক প্রধান আরও বলেন, ‘এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা, সহিংসতা, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার ও সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়েও আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অবশ্যই এসব কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
জোসেপ বোরেল বলেন, এ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেদিকে তাঁরা গভীর নজর রাখবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বাংলাদেশ সম্পর্কের মূলনীতিগুলো বিবেচনায় রেখে তাঁরা আশা করছেন, বাংলাদেশে সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানানো হবে।
(দৈনিক প্রথম আলো প্রতিবেদন)
মন্তব্য করুন