এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: বাংলাদেশ স্থিতিশীল না হলে প্রতিবেশীদের পক্ষে তা হবে বিপজ্জনক। বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, মিয়ানমার সর্বত্র প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বুধবার (৭ আগস্ট) ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন সরকারের প্রথম কাজ।
ড. ইউনূস বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের দেশ। জনসংখ্যার অধিকাংশ যুব সম্প্রদায়। জীবনে তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি। সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই হবে প্রধান কাজ। ওখান থেকেই আমাদের শুরু করতে হবে। তাদের বলতে হবে, গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তোমরা সবাই হবে তার অংশীদার।’
এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, দেশে এতকাল আইনশৃঙ্খলা ছিল না বলেই আজ এই অস্থিতিশীলতা। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছিল এবং তা করতে তিনি বাধ্য হন। এখন মানুষ সেই পতনের উদযাপন করছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর এটা দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবস। প্রথমটা ছিল পাকিস্তানের দাসত্ব থেকে শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া, এবার স্বৈরাচারী সরকারের কাছ থেকে। শুরু হয়েছে এক নতুন যুগের। মানুষ এখন মুক্তির স্বাদ নিচ্ছে।
সেই উদযাপন যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, সেখান থেকেই স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
এনডিটিভির আরেক প্রশ্নের জবাবে নোবেলজয়ী বলেন, দেশবাসীকে গণতন্ত্রহীন করে রেখে শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করে রেখেছিলেন। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রই অস্থিতিশীলতার ওষুধ। এবার বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পাবে। স্বচ্ছ নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবে। এই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য সেটাই।
ইসলামি মৌলবাদ, উগ্রপন্থা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে দেওয়া ইত্যাদি নিয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এসব ঘটনার যাবতীয় দায় শেখ হাসিনার। নিজের বাবার ভাবমূর্তি তিনিই নষ্ট করেছেন। দেশের মানুষের মন এমন বিষিয়ে দিয়েছেন যে আজ বীতশ্রদ্ধ হয়ে মানুষ এমন কাজ করছে। এর দায় হাসিনারই।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা ঠিক করাই এখন এক নম্বর কাজ, হাসিনা যে কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। সে কারণেই তাঁর সরকার এভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে গেল। আইনের শাসন জারি করতে পারলে এমন হতো না। এখন দেশে যা চলছে, তা হাসিনার শাসনের ধারাবাহিকতা। আমাদের এখন এটা নিশ্চিত করতে হবে যে লোকজন উদ্যাপন শেষে ঘরে ফিরে যাবে। কাজে মন দেবে। মুক্তমনে কাজ করবে।’
হাসিনার কী হবে, আপাতত ভারতে থাকলেও কোন দেশে যাবেন, সে সম্পর্কে তাঁর ধারণা আছে কি না, জানতে চাওয়া হলে ড. ইউনূস বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। কারও সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। তবে তাঁর ভারতে থেকে যাওয়াটা ঠিক হবে না।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান বলেন, বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রী হলে দেশের সংখ্যালঘুরাও নিরাপদে থাকবেন। তাঁদের বক্তব্য প্রাধান্য পাবে। গুরুত্ব পাবে। গ্রাহ্য হবে। সংখ্যালঘুরা ভোট দিতে পারবেন। নিজেদের প্রতিনিধি নিজেরাই বেছে নিতে পারবেন, যেমন ভারতের সংখ্যালঘুরা পান।
এসআই/
মন্তব্য করুন