আব্দুল্লাহ আল বাকী: শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। লাইলাতুল কদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাত।
পবিত্র কুরআনুল কারিম নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই রাতকে হাজারের মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উত্তম ও মহা সম্মানিত রাত হিসেবে আমারদের জন্য দান করেছেন। প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদরের রাত পাওয়া যায়।
কোরআন ও হাদীসে এ রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত জেগে (কিয়াম) ইবাদাত করবে, অতঃপর সে রাত লাভ করার তাওফীকপ্রাপ্ত হবে, তার পিছনের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে।’
এ রাতের কিয়াম হলো, তাহাজ্জুদের সালাত আদায় ও অন্যান্য সালাত আদায় করা।
সুফইয়ান রহ. বলেন, লাইলাতুল কদরে দো‘আ করা আমার কাছে সালাত আদায়ের চেয়ে অধিক প্রিয়। আর যদি কুরআন তিলাওয়াত করে, দো‘আ করে এবং দো‘আর দ্বারা আল্লাহ নৈকট্য তালাশ করে তাহলে তা উত্তম। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা (রা.) কে একটি বিশেষ দো‘আ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের রাতে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন এবং দীর্ঘ কিরাত পড়তেন। রহমাতের কোনো আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমাত চাইতেন, আযাবের আয়াত আসলে তাঁর কাছে পানাহ চাইতেন। অতএব, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত, কিরাত, দো‘আ ও গবেষণা একত্রিত করতেন। রমযানের শেষ দশকে ও অন্যান্য সময় এভাবে সালাত আদায় করা উত্তম।
শা‘বী বলেন, কদরের দিন রাতের মতোই মর্যাদাবান। ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেন, কদরের রাতের পরিশ্রমের মতো কদরের দিনেও ইবাদতে কঠোর পরিশ্রম আমি মুস্তাহাব মনে করি। তাই, সারারাত ইবাদত করে আবার সারাদিন ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়াও ঠিক হবে না।
কদরের রাতে রাসূল (সা.) দোয়া ও ক্ষমাপ্রার্থনা করতেন। হাদিসে একটি বিশেষ দোয়ার বর্ণনাও পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলি, কদরের রাতে আমি কী বলবো, তিনি বলেন, তুমি পড়বে-
اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফউন। তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। -সুনানে নাসায়ি
এই রাতে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকার পাশাপাশি বেশি করে এই দোয়াটি পড়া উচিৎ । তাবেয়ি মুজাহিদ (র.) বলেন, ‘এ রাতের ইবাদত, তেলাওয়াত, দরুদ কিয়াম ও অন্যান্য আমল হাজার মাস ইবাদতের চেয়েও উত্তম।’ তাই, এ সুযোগ হাতছাড়া না করে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে আল্লাহর সান্নিধ্য তালাশ করার জন্য মনোনিবেশ করা উচিৎ ।
লেখক: আব্দুল্লাহ আল বাকী
এমটিআইএস, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
মন্তব্য করুন