মোস্তাফিজুর রহমান রাফি: বর্তমানে ভর্তি পরীক্ষা স্রেফ একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অল্প সংখ্যক সিটের বিপরীতে লক্ষ লক্ষ প্রার্থীর এই পরীক্ষা রূপ নিয়েছে ভর্তি যুদ্ধে। এজন্য স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে বা পাবলিকিয়ান হতে চাইলে ইন্টারমেডিয়েট থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। কেননা আগে থেকে সচেতনতার সহিত পড়াশোনা না করলে এইচএসসি পরীক্ষার পরবর্তী সময়ে সবকিছু কমপ্লিট করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে অনেকের চান্স মিস হয়ে যায়। তাই অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে চাইলে ইন্টারমেডিয়েট সেকেন্ড ইয়ার থেকেই যৌথ প্রস্তুতি নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
তবে মনে রাখতে হবে ভর্তি পরীক্ষার পড়ার জন্য একাডেমিক পড়াকে কম গুরুত্ব দিলে চলবে না। এইচএসসির রেজাল্ট সর্বোচ্চ ভালো রাখতে হবে। চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে এই রেজাল্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এখন আলোচনা করা যাক একসাথে কীভাবে এইচএসসি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতি নিবে। মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিলে তিনটি সাবজেক্টের পরীক্ষা দিতে হয়। যেমন: বাংলা, ইংরেজি, এবং সাধারণ জ্ঞান।
বাংলা: সাধারণত এইচএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র থেকে বহুনির্বাচনী আর সৃজনশীল প্রশ্ন হয়ে থাকে। কিন্তু তোমার শুধু এই দুই প্রকার প্রশ্নের উত্তর করার জন্য পড়লেই হবে না। এইচএসসি সিলেবাসের সব কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, লেখক/কবি পরিচিতি খুব ভালো করে পড়তে হবে। লেখক/কবি পরিচিতি থেকে বিশেষ করে লেখক/কবির জীবন ও সাহিত্যকর্মগুলো ভালো করে পড়তে হবে । কবিতাগুলো মুখস্ত করতে হবে। মুখস্ত করতে না পারলেও একটা লাইন দেখে যেন পরের লাইনটা অনায়াসেই বলতে পারো। অন্তত এভাবে পড়তে হবে। গল্প এবং নাটকের উক্তিগুলো মনে রাখতে হবে। এই উক্তিটি কার প্রশ্ন করলেই যেন উত্তর দিতে পারো। এভাবে পড়লে এইচএসসি পরীক্ষার বহুনির্বাচনী পরীক্ষায়ও ভালো করবে সেই সাথে তোমার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও অনেকটা এগিয়ে থাকবে।
বাংলা দ্বিতীয় পত্র থেকে এইচএসসি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত টপিকগুলো- যেমন: উচ্চারণ, বানান, ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান, সমাস, পরিভাষাগুলো একটু গভীরভাবে পড়বে।
ইংরেজি: এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ইংরেজি প্রথম পত্র থেকে তোমাকে এমনিতেও প্যাসেজ, কবিতা, পড়তে হবে। কিন্তু ভর্তি প্রস্তুতির জন্য এগুলো গভীরভাবে পড়তে হবে। প্যাসেজ থেকে সিনোনিম, এন্টোনিম, খুব ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। কবিতা অংশ থেকে কবিতার লাইন এবং ওয়ার্ড মিনিং, কবির নাম, দেশ, এবং উপাধি মনে রাখতে হবে। এছাড়াও টেক্সটবুকের প্যাসেজের উপরের এবং নিচের অংশের ওয়ার্ম আপ এক্টিভিটিজ প্র্যাক্টিস করতে হবে।
ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত টপিকগুলো- যেমন: Preposition, Right form of verb, Narration, Sentence Connector খুব ভালোভাবে প্র্যাক্টিস করবে। এর পাশাপাশি Sentence, Parts of Speech, Tense এই ব্যাসিকগুলো এখন থেকেই পড়া শুরু করতে হবে এবং বেশি বেশি প্র্যাক্টিস করতে হবে। তাহলেই ইংরেজির প্রতি ভয় দূর হবে।
এছাড়াও প্রতিদিন দশ লাইন ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং প্র্যাক্টিস করতে পারো। এটা ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে ও কাজে লাগবে। আর এইচএসসি পরীক্ষায় প্যারাগ্রাফ লেখার সময় তো সুফল পাবেই।
সাধারণ জ্ঞান: ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের সিলেবাস অনেক বড়। আর সাধারণ জ্ঞানের অনেককিছুই দিনদিন পরিবর্তন হয়। তাই বলে এখনই বাজারের সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ার পক্ষে আমি নই। এই মুহূর্তে তোমার গ্রুপ সাবজেক্টগুলো- যেমন: ইতিহাস, পৌরনীতি, ভুগোল, অর্থনীতি, আইসিটির ব্যাসিক পড়াগুলোই যথেষ্ট। বিশেষ করে প্রাচীন জনপদ, বিভিন্ন রাজাদের আমল/যুগের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
এভাবে পড়লে এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো করার পাশাপাশি ভর্তি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তুমি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে পারবে। পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষার পড়াগুলো এত ভারী মনে হবে না। নিজের আত্মবিশ্বাস নিজেই অনুভব করতে পারবে।
লেখা: মোস্তাফিজুর রহমান রাফি
শিক্ষার্থী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন