নিউজ ডেস্ক: আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন দলের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সরকারের মন্ত্রীরা। অনেকে হতাশ ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে অনেকে দেশের ভেতরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অথবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন এবং আত্মগোপনে চলে গেছেন। কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ঘটনার গভীরতা আঁচ করতে পেরে অনেকেই সপরিবারে বিদেশে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় দেশত্যাগ করতে না পারায় অনেক নেতাই প্রাণভয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় চেয়েছেন।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করায় দিশেহারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, দলের শীর্ষ নেতা থেকে সর্বস্তরের নেতারা। দিগ্বিদিক হয়ে বেশিরভাগ নেতাই পরিবার ছাড়াই গা ঢাকা দিয়ে পরে আত্মগোপনে চলে যান। কেউ পরিবারকে সঙ্গে নিতে না পারলেও পরে নিরাপদে সরিয়ে নেন বলে জানা গেছে।
গত সোমবার দুপুরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি হেলিকপ্টারে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ দেশত্যাগ করেন। এরপরই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাদের ওপর হামলা শুরু হয়। আক্রান্ত হয় বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটিও আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। শুধু রাজধানীতেই নয়; প্রায় প্রতিটি জেলার আওয়ামী লীগের শাখা, সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যালয় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
জানা যায়, পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অনেক মন্ত্রী-এমপি দেশ ছাড়েন আগেই। অবশ্য বিদেশে অবস্থান করা কেউ কেউ ফিরেও এসেছিলেন। আবার অনেকে বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হন। মন্ত্রী-এমপিরা ব্রিটেন, দুবাই, ভারত, মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও চীনে পাড়ি জমান। এর মধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন।
অন্যদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার সময় জুনাইদ আহমেদ পলককে আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ এবং পরে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হেফাজতে নেয়। একই ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদের ক্ষেত্রেও।
এদিকে, গত রোববার এমপি-মন্ত্রী ও সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর অনেকে বিশেষ প্রটোকল চেয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে চিঠি দেন। এরই এক ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিমানে দেশ ছাড়েন।
বিমানবন্দর সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রীদের মধ্যে গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি পরিবারের চার সদস্যসহ মালয়েশিয়া, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান কানাডায় চলে গেছেন।
অন্যদিকে, ময়মনসিংহ-৮ আসনের এমপি মাহমুদ হাসান সুমন, কুমিল্লা-৮ আসনের এমপি আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজল ভারত, ভোলা-৪ আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব দুবাই, সংরক্ষিত আসনের এমপি পারভীন জামান ব্যাংকক, চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র, কুমিল্লা-৩ আসনের এমপি জাহাঙ্গীর আলম সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন।
এ ছাড়া সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, এমপি নুর-ই হাসনা লিলি চৌধুরী, ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি হাবিব হাসান, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইনও বিদেশে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা, এমপি ও মন্ত্রিসভার সদস্য দেশের ভেতরেই অবস্থান করছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে থেকেই অনেকে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার জন্য নানা মাধ্যমে চেষ্টা করছেন।
এসএস/
মন্তব্য করুন