চবি প্রতিনিধি : মারধরের পর শিক্ষার্থী থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৫ নেতার বিরুদ্ধে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। একই অভিযোগে অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে জিডি করা হয়। ভুক্তভোগী হলেন ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জাহিদ হাসান।
বুধবার (১৪ আগস্ট) ভুক্তভোগী চবি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জাহিদ হাসান নিজে বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে হাটহাজারী মডেল থানায় জিডি করেন।
অভিযুক্তরা শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইনের অনুসারী বলে জানা গেছে। তারা হলেন ফারসি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের অনিক দাশ, একই সেশনের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাহিন রুবেল, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের জাহেদ এবং বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আকিব জাবেদ ও একই সেশনের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অপু আহমেদ অনিক।
থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গেল বছরের ০৩ জুন সকালে ব্যায়াম করতে বের হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী মোড় থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসানকে ছাত্রলীগের নেতারা জোরকরে শাহজালাল হলে তুলে নিয়ে যায়। তাকে হলের গেস্ট রুমে আটকে রেখে রাজনৈতিক অপবাদ দিয়ে জেরা করে তারা। গায়ে সুন্নাতি লেবাস আর মুখের দাড়ি দেখে তাকে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের সদস্য অপবাদ দিয়ে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে ছাত্রলীগের নেতারা।
এসময় তার সঙ্গে থাকা মোবাইলফোন চেক করে ছাত্র শিবিরের সাথে কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেলে তার ওপর আরও চড়াও হয় নেতারা। শিবিরের সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দেওয়ানোর জন্য বেধড়ক মারধর করে। ছাত্রলীগ নেতাদের এলোপাতাড়ি কিল, লাথি-ঘুষিতে বেশ জখম হয় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতারা ককটেলসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক দ্রব্যাদিসহ তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিবে বলে হুমকি দিতে থাকে। এসময় তার কাছে থেকে মামলার ১ নং আসামি অনিক দাশ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে পুলিশে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিতে থাকে নেতারা। টাকা দিতে অস্বীকার করলে শুরু হয় তার ওপর অকথ্য নির্যাতন।পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর রুমমেট গালিব আল-শাহরিয়ার তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। জাহিদ হাসানের বড় ভাই রাকিব ছাত্রলীগের নেতাদেরকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তার ভাইকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলে।
ঐদিন সন্ধ্যায় বড় ভাইয়ের দেওয়া ২৫ হাজার টাকা মামলার ৩নং অভিযুক্ত ও ছাত্রলীগ নেতা আকিব জাবেদের কাছে পৌঁছে দেয় জাহিদ হাসান। এই ঘটনার জানাজানি হলে বা মামলা দায়ের করলে জাহিদকে মেরে লাশ গুম করার হুমকি দিতে থাকে ছাত্রলীগের নেতারা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, আমি জিডি করেছি তাদের বিরুদ্ধে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আইনি পদক্ষেপ নিলে তৎকালীন পুলিশসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহযোগিতার সম্ভাবনা ছিল। তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল, তাই প্রাণভয়ে আমি ঘটনা জানাজানি করিনি।
নিজের নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, খুনি হাসিনা সরকারের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মূলত পেশাদার সন্ত্রাস। আগামীতে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আছি। তবে পুলিশ প্রশাসন থেকে আমি এনিয়ে সর্বোচ্চ আশ্বাস পেয়েছি। আমি তাদের বিচার চাই।
জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ওসি এসআই মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। তাকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। আমরা তার নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কাজ করে যাবো। তাছাড়া এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএস/
মন্তব্য করুন