আনিসুর রহমান: সম্প্রতি স্বাধীতাত্তোর প্রথম প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডীন অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। ১৭৫ একরের ক্যাম্পাসে গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন উপাচার্যের কাছে রয়েছে শিক্ষার্থীদের নানাবিধ প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীদের সেসব প্রত্যাশার উল্লেখযোগ্য কিছু প্রত্যাশা ফিচারে তুলে ধরেছেন এডুকেশন টাইমস ক্যাম্পাস প্রতিনিধি শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান।
বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে গবেষণায় গুরুত্ব
আহমদ আব্দুলাহ
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশ সমৃদ্ধ করা, গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গবেষণা ও প্রজেক্টের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগও বাড়ানো প্রয়োজন। এতে ছাত্র-শিক্ষক মেলবন্ধন আরও মজবুত হয়। তিনি শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করতে পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করা, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালা এবং সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার প্রসারে জোর দিবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ও অনলাইন শিক্ষার প্রসার ঘটানোর সাথে সাথে আন্তর্জাতিক বৃত্তি, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং গবেষণা সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে নতুন ভিসির জোর দেওয়া উচিত।
সেশনজট নিরসন
ইকবাল হোসেন ইমন
আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পিছনে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো সেশনজট। সেশনজটের করালগ্রাস অসহিষ্ণু হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা ও গবেষণার স্পৃহা হারিয়ে ফেলে। এই সেশনজটের প্রধান কারণ বিভাগে দায়িত্বরত শিক্ষকদের দায়িত্বহীন আচরণ। শিক্ষকরা নিজ ক্লাস বাতিল করে রাজনৈতিক মিটিং মিছিল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। শিক্ষকদের মধ্যে সাদা, লাল ও নীল দল নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে ক্রোন্দল সৃষ্টি হয়। যার ফলে পরীক্ষা ও পরীক্ষার ফলাফলে বিলম্ব হয়। ফল হিসেবে ৪ বছরের কোর্স ৬ বছর লাগে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব আছে। নতুন ভিসি মহোদয়ের সমীপে প্রতিটি বিভাগে পর্যাপ্ত মনিটরিং এর মাধ্যমে সেশনজট নিরসনের প্রত্যাশা করি।
লেজুরভিত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই
লুবাবা ঐশী
‘ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
গণঅভ্যুত্থানে ঐতিহাসিক ‘নয় দফা’ দাবির অন্যতম একটা দাবি ছিল সকল ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা।
নতুন ভিসির কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি যেন বন্ধ করেন। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর হলগুলোতে আধিপত্যে বিস্তার করে। এর ফলে ক্যাম্পাসে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও সমস্যা সৃষ্টি হয়। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি পরিবর্তে সুস্থ ধারার ছাত্র সংসদ ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চালু রাখা যেতে পারে। হলের লেজুরভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করে হলগুলোতে প্রশাসনিক উপায়ে রেজাল্ট ও দূরত্বের ভিত্তিতে সিট দেয়া।
আসলে আমাদের সিস্টেমটা বদলানো উচিত। একজন শিক্ষকের যখন উপরে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা রাজনীতি সেক্ষেত্রে তারা রাজনীতি নিয়ে পরে থাকে সবসময়।শিক্ষকদের ভিতরে রাজনীতির ফলে শিক্ষকরা ক্লাস পরীক্ষা বাদে রাজনীতির মিটিং মিছিলে দৌড়াদৌড়ি করে। আবারও ফ্যাসিবাদী আমলে লক্ষ্য করেছি অনেক অযোগ্য লোক দলীয়ভাবে বড় অংকের টাকা দিয়ে নিয়োগ দিয়েছে। সিস্টেম হওয়া দরকার এমন যে, শিক্ষকের মূল্যয়ন পদ্ধতি হবে মেধার ভিত্তিতে কার গবেষণা প্রবন্ধ বেশি এবং ছাত্রদের কাছে কার গ্রহণযোগ্যতা বেশি এর ভিত্তিতে পদন্নোতি দেওয়া উচিত। শিক্ষকের কাজ হলো গবেষণা করা ও জাতি গঠন করা।
আবাসন ও খাবারের মান বৃদ্ধিকরণ
উমাইয়া উর্মী
ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ
আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট আবাসন সমস্যা। আমরা অধিকাংশ শিক্ষার্থী পুরো ক্যাম্পাস জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি তবুও হলে একটা সিট বরাদ্দ পাচ্ছি না। আর দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে খাবারের নিম্নমান । বৈধভাবে হলের সিট বরাদ্দ ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে আবাসন সমস্যা নিরসন, হলের ডাইনিং গুলোতে খাবারের মান বৃদ্ধিকরণ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন খুবই জরুরি। এছাড়া, বিশেষ করে হলের রিডিংরুম গুলো সংস্কার এবং আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে যুগোপযোগী ও আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। হলগুলোতে গেস্টরুম এবং এক রুমে ৮/১০ জন শিক্ষার্থীদের (গণরুম) অমানবিক জীবনধারণের যে রীতি চলে আসছে বহুদিন ধরে তার অবসান করে নতুন ভিসি শিক্ষার্থীদের এই কাঙ্ক্ষিত সুবিধাগুলো নিশ্চিত করে সুন্দর, সুষ্ঠু এবং পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু বিকাশে ভূমিকা রাখবেন বলে সেই প্রত্যাশা।
এএকে/
মন্তব্য করুন