শাকিল শাহরিয়ার: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার মান উন্নত করা এবং শিক্ষার্থীদের একটি আবাসিক শিক্ষার পরিবেশে গড়ে তোলা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালে, তখন নাম ছিল “জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম ইউনিভার্সিটি।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন ড. মুফাজ্জল হক। ১২ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দেওয়ার ইতিহাসের পেছনে রয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের নীতিগত ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব। ১৯৭০ সালে “জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম ইউনিভার্সিটি” হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষতার উপর গুরুত্ব দেয় এবং সকল ধর্মের মানুষকে সমানভাবে শিক্ষায় সুযোগ প্রদান করার নীতিমালা গ্রহণ করে।
১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়, এবং নাম থেকে “মুসলিম” শব্দটি বাদ দিয়ে “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়” রাখা হয়। এই পরিবর্তনটি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির প্রতিফলন হিসেবে গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সকল ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখার প্রয়াস চালায়।
এই নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটি ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক ও বৈচিত্র্যময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করে, যেখানে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক মানের শিক্ষায় এবং গবেষণায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে সকল শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে থাকার সুযোগ প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে শীতকালে অতিথি পাখির আগমনের ফলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে, যা এটি একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক এবং গবেষণার ক্ষেত্রে সাফল্যের নতুন মাত্রা অর্জন করেছে। বর্তমানে এখানে ৩৬টি বিভাগ, ৬টি অনুষদ এবং বেশ কয়েকটি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
এসএস/
মন্তব্য করুন