এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: বিসিএসের (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) ভাইভা বোর্ড, সবচেয়ে কঠিন একটি ধাপ। এই ধাপটি পার হতে পারলেই মেলে সোনার হরিণ। কিন্তু এখানেই হার মানতে হয় অনেক বিসিএস প্রত্যাশীকে। কিন্তু কেনো এমনটা হয়? প্রিলিমিনারি, রিটেনের মতো কঠিন যুদ্ধে সফল হওয়ার পর ভাইভা বোর্ডে কী এমন হয় যার কারণে সোনার হরিণ হাত ছাড়া হয়। সেসব কারণ তুলে ধরে লেখেছেন রবিউল আলম লুইপা। তিনি রোড টু বিসিএস’র লেখক ও ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভাইভা বোর্ডে ফেল করার কী কারণ আছে।
আপনি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও যেসব কারণে ফেল করতে পারেন:
১. আপনি যে চাকরির জন্য ভাইভা দিতে গিয়েছেন, ভাইভা বোর্ড আপনাকে তার অযোগ্য মনে করলে ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া হতে পারে। যেমন- আপনি বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডার পছন্দক্রমের প্রথমে রেখেছেন, কিন্তু আপনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না কিংবা আপনার আচরণ ও ব্যক্তিত্ব দেখে মনে হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না।
ভাইভা বোর্ডের কাছে এমনটা মনে হলে আপনাকে ফেল করানো হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে- আপনাকে অল্প নম্বর দিয়ে পাস করানো হলে আপনি লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর থাকার কারণে পররাষ্ট্র ক্যাডার পেয়ে যেতে পারেন। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২. সিভিল সার্ভিস বা আপনাকে যে পদে নিয়োগ দেওয়া হবে আপনার মধ্যে সেই কর্মকর্তার স্বরূপ অনুপস্থিত থাকলে (যেমন— আপনার পোশাক মানানসই না হলে বা বাচনভঙ্গি আঞ্চলিকতায় দুষ্ট হলে) বা যদি এমন মনে হয় প্রশিক্ষণ দিয়েও আপনাকে যোগ্য করা যাবে না, এমন অবস্থায় সঠিক কর্মকর্তা বেছে নেওয়ার অংশ হিসেবে আপনাকে ফেল করিয়ে দেওয়া হতে পারে।
৩. প্রশ্নোত্তরে বোর্ডের সঙ্গে অযথা তর্কে জড়াবেন না। বোর্ড সদস্য ইচ্ছা করেই কোনো ভুল তথ্য দিয়ে আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় বিনীত ও বুদ্ধিমানের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৪. সব প্রশ্নের উত্তর না পারলেও নিজের পঠিত বিষয়, নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আপনার সম্পর্কে ভাইভা বোর্ডে নেতিবাচক বার্তা প্রকাশ পাবে। এটিও ভাইভায় ফেলের একটি কারণ হতে পারে।
৫. আপনার কোনো কথা বা আচরণে যদি মনে হয় আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন বা নিজের রাজনৈতিক পরিচয় বারবার প্রকাশ করলে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় আপনাকে ফেল করানো হতে পারে। তাই রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলো কৌশলে এড়িয়ে যান।
৬. সিভিল সার্ভিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরির গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন কর্মকর্তাকে অনেক ধরনের মানসিক প্রেশার সামলাতে হয়। তাই অহেতুক ভীতি, অল্পতে ঘাবড়ে যাওয়া, মারাত্মকভাবে নার্ভাস হয়ে যাওয়া একজন ভাবী কর্মকর্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটি বিসিএসের ভাইভায় আমার পরের প্রার্থী আগের দুই বিসিএস ভাইভায় ফেল করেছিলেন। একটি ভাইভায় তাঁকে কয়েকবার বিসিএসের পূর্ণরূপ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নার্ভাস হয়ে উত্তরে বারবার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কর্ম কমিশন।’
৭. প্রশ্নের উত্তর বা তথ্য প্রদানে ছলনার আশ্রয় নেওয়া, কোনো বিষয়ে অজুহাত দাঁড় করানো, স্যরি বলতে কার্পণ্য করা, ইংরেজি প্রশ্নে বাংলা উত্তর দেওয়া, আত্মবিশ্বাসের অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, মুদ্রাদোষ (বারবার suppose, মনে করেন, ধরেন, বুঝলেন স্যার ইত্যাদি বলা), তোতলামি— এসব কারণে ভাইভা বোর্ডে আপনার নেতিবাচক ধারণা হতে পারে। এর প্রভাব পড়বে ভাইভার নম্বরে।
চাকরির ভাইভায় ভালো নম্বর পাওয়া মানেই মেধাতালিকায় থাকা নয়। চাকরির লিখিত ও ভাইভার নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়, যেখানে লিখিত পরীক্ষায়ই পুরো নম্বরের বড় অংশ। তবুও প্রতিটি ধাপের মতো ভাইভায়ও ভালো করার চেষ্টা আপনার মেধাতালিকায় থাকার সম্ভাবনাকে এগিয়ে রাখবে। আর আপনি ভাইভায় ফেল মানে তীরে এসে তরি ডুবে গেল। শুভকামনা সবার জন্য।
তথসূত্র: রোড টু বিসিএস, পৃষ্ঠা-১৯৬
এসআই/
মন্তব্য করুন