সাইফুর রহমান শিহাব, জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতায় অক্লান্ত সময় পার করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউটস।
আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল) গুচ্ছ ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ অন্যান্য ফটকে এমন চিত্র দেখা যায়।
পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ছাড়াও অসুস্থ পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সহায়তা, সারিবদ্ধভাবে কেন্দ্রে প্রবেশ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তারা। পরীক্ষা কেন্দ্রে নিজস্ব পোশাক পরিহিত একদল সুশৃঙ্খল সদস্যকে ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতায় নিরলস পরিশ্রম করতে দেখা গেছে। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ কাজে ব্যস্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিএনসিসি ক্যাডেট ও রোভার স্কাউটস সদস্যরা। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের যথাসময়ে সারিবদ্ধভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ ও প্রাথমিক নির্দেশনা দেয়াসহ পরীক্ষা কেন্দ্রের সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করেছেন তারা।
এ সেবামূলক কাজের অনুভূতি সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্টের ক্যাডেট আন্ডার অফিসার কে এম যাবের নোমান বলেন, প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা গুলোতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্টের পক্ষ হতে সেবা প্রদান করা আমাদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক ও রোমাঞ্চকর একটি কাজ। এবার বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ ব্যাবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তরিকত প্রচেস্টায় নির্বিঘ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরীক্ষাগুলোয় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি প্রায় প্রতি বছরই কিছু শিক্ষার্থী অনেকটা দেরিতে পরীক্ষার হলে এসে পৌঁছান বা ভুল কেন্দ্রে চলে আসেন, এ বিষয়ে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকবৃন্দের আরো সচেতন হওয়াটা জরুরি।
এছাড়াও বিএনসিসির ক্যাডেট সার্জেন্ট তুলি বলেন, আমাদের বিএনসিসি একটা সুশৃঙ্খল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংগঠনের কাজই ডিসিপ্লিন বজায় রেখে মানুষের সেবা করা। সব সময়ই সব পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলার সাথে বিএনসিস স্বেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করে আসছে। এমন একটা সংগঠনের সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় বিএনসিসির সদস্যরা শৃঙ্খলার সাথে সেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালন করেন এবারও করেছেন এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও করে যাবেন। ভর্তি পরীক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন অপরিচিত জায়গায় তারা মোটামুটি অসহায় একটি পরিস্থিতিতে পড়েন। নিজের সিট খুঁজে পান না অনেকে আবার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় তাদের সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বিএনসিসি রোভারের মতো সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। বিএনসিসির সদস্যরা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে বিভিন্নভাবে সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। অনেক শিক্ষার্থী ছিলেন যাদের শারীরিক অসুস্থতা ছিলো হাটতে পারছিলেন না। তাদেরকে আমিসহ আমাদের বিএনসিসি সকলর ক্যাডেট সাহা্য্য করেছেন পরীক্ষার হল পর্যন্ত পৌঁছাতে। অনেকে সময়মতো হলে পৌঁছাতে পারেননি তাদেরকে সঠিক জায়গায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আসলে মানুষকে সাহায্য করার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা লুকিয়ে থাকে। একজন মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে উপকার করার যেই প্রশান্তি এটা অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। আর বার বার এই প্রশান্তি উপভোগ করার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডের কর্পস (বিএনসিসি)।
এ ব্যাপারে কোম্পানি কমান্ডার ও অফিসার ইনচার্জ পিইউও আতিয়ার রহমান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দেয় বিএনসিসি। পরীক্ষার দিন প্রতিটি ফটকে ক্যাডেটরা থাকে এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কাজ করে। তারা শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে।
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৫ সাল থেকে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি ‘১ বিএনসিসি ব্যাটালিয়ন রমনা রেজিমেন্ট’র অধীনে রয়েছে। এতে ৬টি প্লাটুন রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি ছেলেদের ও ৩টি মেয়েদের। প্রত্যেক প্লাটুনে ৩১ জন করে ক্যাডেট আছে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসি কন্টিনজেন্টে সর্বমোট ১৮৬ জন ক্যাডেট রয়েছে।
এসআই/
মন্তব্য করুন