কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একদল গবেষক দাবি করেছেন তারা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাপাইনবাবগঞ্জের গোমোস্তাপুর উপজেলার প্রশাসনিককেন্দ্র রোহানপুরে পাওয়া বিভিন্ন প্রত্ন সামগ্রী উপর ভিত্তি করে আদিকালে ঐতিহাসিক বরেন্দ্রভূমির প্রবেশদ্বার শনাক্ত করেছেন। যা ২ হাজার বছরের পুরনো।

শনিবার (১১ মে) গবেষণালব্ধ ফলাফল রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেন তাঁরা। এই গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন।

এই গবেষণা দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চারজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান খান, সহকারী অধ্যাপক মো. নিয়ামুল হুদা, সহকারী অধ্যাপক শারমিন রেজোয়ানা, সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ এবং শান্ত-মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা নাজনীন ও রোহনপুর গ্রামের ঐতিহ্য সংগ্রাহক মাহির ইয়াসির।

গবেষণার সাক্ষ্য স্বরূপ এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনের পাশে প্রত্ন স্থল থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন হাজার বছরের পুরোনো ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা, ছাঁচে ঢালা তাম্রমুদ্রা, উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মসৃণ মৃৎপাত্র, স্বল্প মূল্যবান পাথরের পুঁতি, ধাতব নিদর্শন, মাটি ও পাথরের মূর্তি, নানা আকৃতির পাথরের বাটখারাসহ প্রাচীন নানা প্রত্ন বস্তু প্রদর্শন করা হয়। মূলত এসব প্রত্নসামগ্রীর বেশির ভাগ পাওয়া গেছে মুদ্রা ও প্রত্নবস্তু সংগ্রাহক মাহির ইয়াসিরের সংগ্রহশালা থেকে।

গবেষকদলের দাবি রোহনপুর অঞ্চলে প্রত্ন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নবস্তু ও এ অঞ্চলের বাস্তুবস্তু বিশ্লেষণ, বসতি বিন্যাস বিশ্লেষণ, স্থাপত্য বিদ্যার ‘টেকসই অঞ্চল পরিকল্পনার’ আলোকে স্থানিক বিশ্লেষণ, অতীত পানি ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ, এর উপরিভাগের ভূ-ত্বক, মাটির ধরণ, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পানির উৎস পর্যবেক্ষণ, ১৯৬০ এর দশকের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষক দল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘এই গবেষণায় সকল সদস্যদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা রহনপুরের এলাকায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর আগে আদি ঐতিহাসিক কালপর্বে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের বিভিন্ন স্বল্প মূল্যবান পাথরের পুঁতি, ধাতব নিদর্শন, মাটি ও পাথরের মূর্তি, নানা আকৃতির পাথরের বাটখারাসহ প্রাচীন নানা প্রত্ন বস্তুর উপর ভিত্তি করে বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বলে আমরা বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছি। ভবিষ্যতে রোহনপুরে পরিকল্পিত খনন চালালে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করছি।’

বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক এবং গবেষক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় একজন শিক্ষক সেখানে সম্প্রতি বেলে লাল পাথরের একটি মূর্তি খুঁজে পেয়েছেন, যা খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। আজ গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বলা যায় রোহনপুর দুই থেকে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। তাই রোহনপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে প্রত্ন নিদর্শনগুলো দ্রুতই সংরক্ষণ করতে হবে।’

এসআই/