রাবি প্রতিনিধি: প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষক সমিতি। বুধবার (০৩ জুলাই) বেলা ১১টায় তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিতে এ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান।
এদিকে, সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার ও প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করায় বৃষ্টির মধ্যেও তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা যারা এই স্কিম তৈরি করলেন তাঁরা নিজেরাই কেন সেই স্কিমের বাইরে থাকলেন। বিদ্যমান পেনশন স্কিমের অধীনে যারা একই সুবিধাদি পেতেন, নতুন স্কিমে তাদের একই স্কিমের অন্তর্ভুক্ত করা হলে সেটি নিয়ে বৈষম্যের কথা উঠত না। যেখানে নতুন বেতন স্কেল সকলের জন্য একসাথে কার্যকর হচ্ছে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য আলাদা সময়ে, আলাদা স্কিম রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি বৈষম্যমূলক এবং দুরভিসন্ধিমূলক। যেখানে স্বয়ং সরকার প্রধান বললেন যারা বিদ্যমান পেনশন স্কিমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নতুন স্কিম তাদের জন্য নয়, তবে কেন আবার প্রচলিত পেনশন স্কিম বাদ দিয়ে নতুন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসার বাধ্যবাধকতা দেখা দিলো।
আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম তথা প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ যে আন্দোলন করছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক। সারা পৃথিবীর কল্যাণ রাষ্ট্র সমূহে যেখানে নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয় সেখানে এদেশে এভাবে কমানোর উদ্যোগ অত্যন্ত বিস্ময়কর! আমাদের প্রতিবেশী দেশসমূহের তুলনায়ও যেখানে আমাদের দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা কম সেখানে প্রত্যয় স্কিমের নামে আরও কমানো অত্যন্ত অবমাননার ও হতাশাজনক। জাতির মেধাবী সন্তানরা এ ধরণের পেশায় আসতে অনুৎসাহিত হবে । এর ফলে ভবিষ্যতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হবে এ দেশ জাতিকে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল এবং স্বতন্ত্র পে স্কেলের দাবীতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, গতকাল ‘স্পষ্টকরণ’ নামে যে বক্তব্য সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে তা হাস্যকর ও শুভঙ্করের ফাঁকি। এটা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইতিমধ্যেই এটি প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য রেখেছেন।
রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে আমরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলমান থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই পারে আমাদের আন্দোলনকে চলমান রাখতে। তবে আগামী ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী থাকায় আমাদের আন্দোলন একদিনের জন্য বন্ধ থাকবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যখন দেশে করোনা মহামারি ছিলো তখনও ক্যাম্পাস বন্ধ ছিলো। ক্যাম্পাস খোলার পর শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে সেই ক্ষতি পুষিয়ে ছিলেন। এভাবেই আমাদের চলমান আন্দোলন শেষ হওয়ার পর আবারও শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন।
এ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক সরকার, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌসসহ অনেকেই।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিবৃতি প্রদান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, মানববন্ধন, প্রতীকী কর্মবিরতি, স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধদিবস এবং ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হয়। এছাড়াও ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।
এসআই/
মন্তব্য করুন