এডুকেশন টাইমস
১০ আগস্ট ২০২৪, ৮:২৭ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

দেশে নতুন সরকার: মাভাবিপ্রবির আশা আকাঙ্খা

মেহেদী হাসান খান সিয়াম: 

কোটা আন্দোলনের জোয়ারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দিগন্তে নতুন এক সূর্যোদয়ের আভাস দেখা দিয়েছিল। যেন বিদীর্ণ মনের আকাশে ফুটে উঠলো বসন্তের নতুন ফুল। এই বসন্তে ফোঁটা প্রথম ফুল শহীদ আবু সাঈদের ধারাবাহিকতায় হাজারো তরুণের আত্মাহুতি এই আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাদের তাজা রক্তে সেচিত এই আন্দোলনের ফসল হিসেবেই গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশের শহর থেকে গ্রাম, সমতল থেকে পাহাড় সব মহল থেকেই আলোর পরিবর্তে আলেয়া, আশার পরিবর্তে হতাশা অধ্যায় মুছে নানা আশা – আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশ্চয় এ সময় মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বহনকারী বিদ্যাপীঠ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(মাভাবিপ্রবি) শিক্ষক – শিক্ষার্থীরাও নানা আশা – আকাঙ্ক্ষার কথা ভাবছেন। মাভাবিপ্রবি থেকে তাদের নানা ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন মেহেদী হাসান খান সিয়াম।

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গণমানুষের অংশগ্রহণে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একটি গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। তরুণদের নেতৃত্বে সফল বিপ্লবের পর গঠিত সরকারকে অভিনন্দন জানাই। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল তরুণদের প্রতি শুভেচ্ছা, যারা সকল নির্যাতন উপেক্ষা করে এবং নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে এই আন্দোলনকে সফল করেছে। এই আন্দোলনে শহীদ সকল বীরদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আহত যারা হাসপাতালে কষ্ট পাচ্ছে, তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক—এই কামনা করি।

বাংলাদেশে একটি বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী ছিল, তবে তা মোটেও সহজ ছিল না। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে আমাদের তরুণরা। তাদের দৃঢ় সংকল্পের কাছে স্বৈরশাসকের বুলেট পরাজিত হয়েছে। আমরা পেয়েছি একটি নতুন ভোর, নতুন সূর্য উদিত হয়েছে। মুক্ত দিনের দেখা পেয়েছি আমরা। মনে হচ্ছে, এই দেশ নামক কারাগার থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। যারা ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেনি, তাদের কাছে এটি ছিল দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। আমি যা সাদামাটাভাবে দেখি তা হলো, এই সংগ্রাম ছিল অহংকারের বিরুদ্ধে, এই সংগ্রাম ছিল শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে। গুম, হত্যা, এবং ভয়ের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে সব ধর্মের মানুষ। সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসাথে লড়াই করে আমরা নিয়ে এসেছি নতুন দিন। এই নতুন দিনের একটাই স্লোগান—পরিবর্তন চাই। নতুন সরকারের কাছে তাই জনগণের প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচুতে। বাক স্বাধীনতা, ভোটের অধিকার, এবং আইনের শাসন কতটা নিশ্চিত হয়, সেদিকে জনগণের নজর থাকবে। যে ডিজিটাল আইনের কারণে কথায় কথায় মানুষকে জেলে ভরা হতো, সেটি কত দ্রুত বাতিল করা হয়, তা নিয়ে সবার আগ্রহ থাকবে। শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে ছাত্রদের দেয়া প্রতিশ্রুতি কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিয়েও মানুষের কৌতূহল থাকবে।

২০১৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কার্যত বিলুপ্ত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিরোধীদের কঠোরভাবে দমন করে, দিনের ভোট রাতে করে শেখ হাসিনার সরকার ভারতীয় সমর্থনে ক্ষমতায় টিকে থেকেছে। নির্বাচন কমিশনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে, বিচার বিভাগকে নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে এবং পুলিশ ব্যবস্থাকে শক্তহাতে পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থেকেছে। বিরোধী দলকে দমন করতে পুলিশকে এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যে, পুলিশ এখন জনগণের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। নতুন সরকারকে ভাবতে হবে কীভাবে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করা যায়। এই প্রতিষ্ঠানে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে, যাতে যে-ই ক্ষমতায় থাকুক, এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন, যেন এগুলো সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকে।

গত সরকারের দমন-নীতির একটি বড় অস্ত্র ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যার মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করতে দেওয়া হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে মানুষের ওপর অত্যাচার, গুম এবং হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আশা করা যায়, নতুন সরকার দ্রুত এই আইন বাতিল করে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। মানুষকে সমালোচনার সুযোগ দিলে সরকার সেখান থেকে দিকনির্দেশনা পেতে পারে এবং নিজেদের সংশোধন করতে পারে। এর ফলে জনগণ দৃশ্যমান পরিবর্তন অনুভব করতে পারবে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থা এখন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। নতুন সরকারের এই খাতে অনেক কিছু করবার আছে। প্রাথমিক শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, ভালো শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, এবং তাদের বেতন বাড়াতে হবে। পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনা জরুরি। একই বিষয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও প্রযোজ্য। একটি শক্তিশালী শিক্ষা কমিশন গঠন করে এই সংস্কার কার্যকর করতে হবে। তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু প্রকল্প চালু করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার গিনিপিগ বানানো উচিত হবে না। অবকাঠামোগত প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এবং শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে পরিবর্তন আনা জরুরি।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছায়নি, তবে আমাদের ছাত্রদের মেধা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান উন্নত করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন উপাচার্য নিয়োগ, যেখানে দলীয় বিবেচনা নয় বরং যোগ্যতা ও প্রতিথযশা শিক্ষাবিদদের প্রাধান্য দিতে হবে। ছাত্ররাজনীতিতে প্রয়োজন গুণগত পরিবর্তন, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। একইভাবে, শিক্ষকদেরও উচিত পাঠদান ও গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। আমরা একটু সচেষ্ট হলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়ন সম্ভব।

এ সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জনগণ দেখতে চায় তাদের প্রত্যাশা পূরণে সরকার কাজ করছে। যদিও সবকিছু একদিনে সম্ভব নয়, তবে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে জনগণ নজর রাখবে। ভালো কাজ না করলে সরকারের জন্য ক্ষমতায় থাকা কঠিন হবে, তবে প্রত্যাশিত কাজ করলে এটি রাজনৈতিক সরকারের জন্য একটি শিক্ষালয় হয়ে উঠবে। জনগণ চায় সরকার সফল হোক, কারণ এই সরকারের সফলতার উপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যত বাংলাদেশ। আমি বিশ্বাস করি, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের মতো আন্তর্জাতিক মানের নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব এবং আসিফ নাহিদদের মত তরুনরা এই প্রত্যাশার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। আমি আশাবাদী যে, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করলে নতুন সরকার সফল হবে এবং আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে পাব।’

– কোটা আন্দোলনে মাভাবিপ্রবির শিক্ষকদের মধ্যে সর্বপ্রথম loud and clear হয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে বিবৃতি দাতা, ড. মোঃ ফজলুল করিম, অধ্যাপক, বিজিই বিভাগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

‘সর্বপ্রথম, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি অশেষ শুকরানা জ্ঞাপন করছি যিনি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদেরকে এই বিজয় দান করেছেন। নানা সীমাবদ্ধতার পরও এই আন্দোলনে যারা আমাদের ক্যাম্পাসকে উজ্জীবিত করেছিলেন, তাদের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। যুক্তিপূর্ণ দাবি এবং নৈতিকতার দিক থেকে এই আন্দোলন আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। একজন প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে, আমি ময়দানে স্লোগান দিয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। এর জন্য নানাভাবে রক্তচক্ষুর রোষানলে পড়তে হয়েছিল।

আমাদের ক্যাম্পাসে আন্দোলনে কোনও নির্দিষ্ট নেতৃত্ব ছিল না। তবুও, অনেকেই এই আন্দোলনকে সফল করেছেন। অনেকে পিছন থেকে উৎসাহ দিয়েছেন, অনেকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও সামনে আসেননি। যখন আমাদের ক্যাম্পাসে কোনও সমন্বয়ক ছিল না, তখন আমরা ২০তম ব্যাচের ছাত্ররা মিলে একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলাম। হয়তো অন্যরাও অনুরূপ গ্রুপ করেছে। সবাই মিলে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছি। আমি কখনও আন্দোলনে আমার ক্রেডিট নিয়ে অন্যকে ছট করতে পছন্দ করিনা। আন্দোলন করেছি নৈতিকতার জায়গা থেকে, ক্রেডিট নেওয়া আমার কাছে মনে হয় নৈতিকতা বিবর্জিত। তাই এ আন্দোলনে কার অবদান কি এমন ভেদাভেদের কথা চিন্তা না করে চলুন আমরা দেশটাকে নিয়ে চিন্তা করি।

একজন ছাত্র এবং দেশের নাগরিক হিসেবে আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে নিম্নলিখিত দাবি জানাই:

আইনের শাসন: আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ নিশ্চিত করা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে তিনি সচেষ্ট হবেন।

স্বাস্থ্যসেবা: চিকিৎসা খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং দেশের মানুষকে দেশেই উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা নাজেহাল। হাসপাতালগুলোতে যাতে নাক না চেপে ধরে যাওয়া যায় ঐরকম পরিবেশ তৈরী করতে হবে।

শিক্ষা: শিক্ষাব্যবস্থার মান উন্নয়ন করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দেওয়া এবং বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে সংস্কার করা। দেশে যে ভঙ্গুর শিক্ষানীতি চালু হয়েছে তা সংশোধন করে একটা উন্নত এবং আদর্শিক শিক্ষা ব্যাবস্থা চালু করা।

গণতন্ত্র: অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা এবং জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।

কর্মসংস্থান: বেকারত্ব দূর করা, দেশে বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং ছাত্ররা যাতে পড়ালেখার পাশাপাশি অন্য কাজ করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, সে ব্যবস্থা করা। ছাত্রদেরকে কেউ যেন বেকার বলে উপহাস না করতে পারে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা: সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সরকারকে সমালোচনা করার সুযোগ দেওয়া।

প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা: সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া। তাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক গুম খুনের অভিযোগগুলোর নিখাঁদ তদন্ত করা এবং তাদরকে বিচারের আওতায় আনা।

বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ: দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ রোধ করা।

আমি আশা করি, আমাদের সবার যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারব।’

-মো. আব্দুল আলীম, ক্রিমিনলজি এন্ড পুলিশ সাইন্স বিভাগ, মাভাবিপ্রবি

‘হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই নতুন প্রজন্মের স্বাধীনতা অর্জন। আবু সাঈদের মতো বুক পেতে দেওয়া, মুগ্ধের মতো নিজস্বার্থ ভাবে যোদ্ধাদের মাঝে পানি বিলিয়ে দেওয়া এখনো কানে বেজে উঠে “পানি লাগবে কারো পানি !”

তাদের রক্ত আমরা কখনোই বৃথা যেতে দিবো নাহ।নতুন সরকারের কাছে আমাদের অনেক চাওয়া পাওয়া আছে। দেশ পুনঃ নির্মানে তাদের অনেক ভূমিকা রাখতে হবে। প্রথমেই তাদেরকে দেশের মানুষের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা জোরদার করতে হবে। দেশে এখন অনেক অরাজকতা সৃষ্টি হইছে।আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমারও অনেক চাওয়া পাওয়া আছে। আমাদের এই নতুন করে নতুন প্রজন্মের এই স্বাধীনতা অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। এখন সময় এসেছে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় যত অনিয়ম-দুর্নীতি আছে ওইগুলো সবার আগে বন্ধ কর।

শিক্ষক,শিক্ষার্থী,কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনীতি বন্ধ করা।এখন বর্তমানে অনেক ক্যাম্পাসে ভিসি নেই সেই সাথে আমাদের ক্যাম্পাসেও ভিসি পদত্যগ করছে। এই সরকারের কাছে প্রথমেই চাওয়া সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে খুব দ্রুত তাড়াতাড়ি ভিসি নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম দ্রুততার সহিত চালু করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দ্রুত ক্লাসে ফেরানো। সর্বশেষ এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং সবার ন্যায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি এই সরকারের কাছে।’

-ফিহাদ হুসাইন, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, মাভাবিপ্রবি

‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ শুরু থেকে আমি নানাভাবে আন্দোলনের সাথে ছিলাম । আন্দোলনের শুরুর দিকে কোটা সংস্কার কে একটি যুক্তিপূর্ণ দাবি মনে করে আমি এই আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করি। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে আমার অন্যান্য সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।

কিন্তু এক পর্যায়ে দেখা যায় একজন সঠিক দিকনির্দেশক এর অভাব বোধ করি। শুরুর দিকে অনেক ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয় সকল আন্দোলনকারীদের।
তবুও সকল বাধা উপেক্ষা করে আমি এবং আমার সহপাঠী, পাশাপাশি অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের অনেকেই ছিল তাদের সাথে একটি ফেইসবুক গ্রুপ খুলি। সেখানে আমরা আন্দোলনের নানা বিষয়ে আলোচনা করতাম, কবে কোথায় আন্দোলনে যাব এইসব জানাতাম।

১৫ জুলাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যখন রাজাকার বলে সম্বোধন করল তখন আন্দোলনটি ছড়িয়ে পড়ে এবং তখন অনেকেই আন্দোলনে যোগদান করেন।

টাঙ্গাইলের সকল সাধারণ স্টুডেন্ট আন্দোলন যোগদান করে। এরপর দেখা দেয় আবাসন সমস্যা। প্রতিটি মেসে গিয়ে পুলিশ খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে দেয়, আমরা মেসে কেন আছি এখনো কেন বাসায় যায়নি ইত্যাদি। এসব কারণে কিছুদিন পর আমাকে মেস থেকে বাড়িতে চলে যেতে হয়। এরপর আমি আমার নিজ এলাকায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি । বাধা অনেক ছিল হুমকিও শুনতে হয়েছে এর জন্য কিন্তু পিছিয়ে পড়িনি।

আন্দোলনে পুলিশ রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে, লাঠিপেটা করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে কিন্তু কোন কিছুতেই আন্দোলনকারীরা পিছিয়ে পড়িনি। অবশেষে ৫ আগস্ট শাসকগোষ্ঠীর পদত্যাগের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় দ্বিতীয়বারের মতো।
৮ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার শপথ গ্রহণ করেছে। আমি আশা করি প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস ,বাংলার ছাত্র সমাজ এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সকলে মিলেমিশে এই দেশটাকে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হবো। যেখানে থাকবে না কোন সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য, দুর্নীতি, অরাজকতা, নিপীড়ন ইত্যাদি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে একজন স্টুডেন্ট এবং সাধারণ নাগরিক হিসেবে কিছু চাওয়া থাকবে। সেগুলো হচ্ছে:

১. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে হবে।
২. মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নতুন সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপর জোর দিয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা এবং নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।
৩. বেকারত্ব দূর করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো এই স্বাধীন বাংলাতেও রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেখানে প্রতিযোগীতামূলক চাকরি খোঁজার সাথেসাথে ১৮ ঊর্ধ্ব সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করা আবশ্যক হবে । যাতে করে অন্তত শিক্ষার্থীরা স্বনির্ভরশীল হতে পারে ,নিজের খরচ নিজে বহন করার ক্ষেত্রে।
৪. প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে মানুষ যেন কারোর ক্ষতি না করতে পারে, যেন কারোর প্রাণ হারাতে না হয় তাই সরকার যেন সাধারণ জনগণের জান মালের নিরাপত্তায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
৫. পরিশেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আমার আবেদন থাকবে তারা যেন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে। যাতে জনগণ তাদের প্রতিনিধি সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারে।’

-সুমাইয়া আক্তার, খাদ্য প্রযুক্তি ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ, মাভাবিপ্রবি

‘দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সর্বপ্রথমে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি, কর্মকর্তা – কর্মচারী রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। যাদের নির্দেশে এই গণ হত্যা হয়েছে তাদের কে অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

স্বশস্ত্র বাহিনী ও সেনাবাহিনীর যে কর্মকর্তারা এই গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দেশের প্রতিটি সেক্টর দূর্নীতিতে জর্জরিত, ঐসব সেক্টরে ঢেলে সাজাতে হবে। যারা অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দেশে শিক্ষা ও গবেষণায় , চিকিৎসা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে‌। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি প্রবাসীদের জন্য তাদের চাওয়া পাওয়ার ওপরে বিভিন্ন সেবামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে, তারা সঠিকভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা।বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার নিয়োগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে নিয়োগ গুলো নিশ্চিত করতে হবে।’

তারেকুল ইসলাম, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, মাভাবিপ্রবি।

 

ইএইচ/

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সকল টিভি চ্যানেলে ‘জুলাই অনির্বাণ’ ভিডিওচিত্র প্রচারের উদ্যোগ 

নিটল মটরস লিমিটেডের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

এইচএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করছে ইমদাদ-সিতারা খান ফাউন্ডেশন

পুতিনের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি  

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তীব্র প্রতিরোধে শেখ হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব

সিওয়াইবি জবি শাখার নেতৃত্বে ইস্রাফিল ও লাভলু

টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশে ২য় স্থানে চবি

কুবিতে সিওইউ সাইক্লিস্টের নতুন নেতৃত্বে মামুন- রাকিন

শিক্ষা ও গবেষণায় সৌদি ফাউন্ডেশনের বৃত্তি, দেবে ৬০ লক্ষাধিক টাকা

ক্যান্টিনের খাবারের দাম এবং মান নিয়ে অস্বস্তিতে বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

১০

শাবিতে মাস্টারমাইন্ড ২.০ শীর্ষক ‘ন্যাশনাল কেস কম্পিটিশন’ উদ্বোধন

১১

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পাটাতনের নেতৃত্বে মাসুম-সায়েম

১২

শাবিতে গণহত্যায় অর্জিত স্বাধীনতা শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী

১৩

এডিবি থেকে ৪০ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ

১৪

বিশ্বের ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা

১৫

ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে বিকাশ

১৬

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন পাকিস্তান সরকারের

১৭

গণ-অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন: শফিকুল আলম 

১৮

৪৬ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও সংকট

১৯

বাকৃবির ফজলুল হক হলে তিন দিনের ফিস্টে উৎসবের আমেজ

২০