জাককানইবি প্রতিনিধি:
গেল ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে দূর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ তুলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর । এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রধান অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হুদার নিকট ক্যাম্পাস সংষ্কারসহ বেশকিছু দাবি উপস্হাপন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গত রবিবার ( ২২ সেপ্টেম্বর) যোগদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নির্বাচিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আবারো নতুন করে নব-নির্বাচিত উপাচার্যের নিকট তৈরি হয়েছে বেশকিছু প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীদের এসকল প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে এডুকেশন টাইমসের প্রতিনিধি মোঃ মোমিন ইসলাম ।
শিক্ষার মান উন্নয়নে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ:-
শিক্ষার্থীঃ মোঃ আজিজুল ইসলাম
অর্থনীতি বিভাগ
৫ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নতুন সূর্য উদিত হয়েছে । যার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদান দেশের ছাত্রসমাজের। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন আসছে ।এই পরিবর্তনের ছোঁয়ায় থেকে বাদ পড়ে নি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ও । জুলাইয়ের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । এই অবস্থায় নতুন উপাচার্যের কাছে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকে এবং উচ্চশিক্ষার উন্নয়ন ঘটাতে উপাচার্যকে রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে একাডেমিক স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সন্ত্রাস মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে হবে পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সকল ধরনের ছাত্র শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে । শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ, এমবুলেন্স ও ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে হবে ।হল বা ক্যান্টিনে খাবরের মান বৃদ্ধি করতে হবে ।হলে সিট মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে বন্টন করতে হবে । লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে পাশাপাশি লাইব্রেরিতে বাইরে থেকে বই নিয়ে পড়ালেখা করা যায় এবং লাইব্রেরি থেকেও যেন বই নিয়ে পড়া যায় এই ব্যবস্থা করতে হবে । একাডেমিক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত ক্লাস নিতে হবে ।সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও রেজাল্ট প্রকাশ করতে হবে । কোনো ধরনের নম্বর টেম্পারিং বা স্বজন প্রীতি করা যাবে না । সবশেষে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সমস্ত কাজে আধুনিকায়ন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে না হয়।
আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সকল যৌক্তিক দাবি পূরণ করবেন ।
নিরাপদ পরিবেশ ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা :
শিক্ষার্থী মোঃ শামীম আহমেদ
পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ
সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশা করেন যে উপাচার্য তাদের সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নত করার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা, যেমন অবকাঠামোর উন্নতি এবং শিক্ষা উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করা, আমাদের প্রত্যাশার একটি অংশ।
শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। তাছাড়া, শিক্ষার্থীদের মতামত এবং উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে শোনার জন্য একটি কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যম গড়ে তোলা উচিত। এছাড়া, বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি করা। এই সব প্রত্যাশা পূরণ হলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও কার্যকরীতা বৃদ্ধি পাবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, নিয়মিত কর্মশালা, সেমিনার এবং আলোচনা সভার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সবশেষে, নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সেবা প্রদান করাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশাগুলি পূরণ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ উন্নত হবে এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারী শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ আবাসিককরণ:-
শিক্ষার্থী মোসাঃ মনিরা আক্তার
১৭ তম ব্যাচ
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হলে পর্যাপ্ত সীট না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে বাইরের মেসগুলোতে থাকে। এতে প্রায়ই সময়ে নারী শিক্ষার্থীরা অনিরাপত্তায় আতংকিত থাকে। তাই
ক্যাম্পাসে আগত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সকল নারী শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল গুলোতে পর্যাপ্ত আসনের ব্যবস্থা করতে হবে । প্রয়োজনের শিক্ষার্থীদের জন্য গণ রুমের ব্যবস্থা করে হলেও সম্পূর্ণ আবাসিকভাবে থাকার নিশ্চিত করতে হবে । তবে কোন গণরুমের শিক্ষার্থীদেরকে যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি হলগুলোতে খাবারের মানোন্নয়নে নিয়মিত মনিটরিং এর পাশাপাশি যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করতে হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি বাস্তবায়ন এবং দূর্নীতি রোধে নিয়মিত মনিটরং:
শিক্ষার্থী শাহিদুল ইসলাম সবুজ
আইন ও বিচার বিভাগ
১। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের রাস্তা ঘাট করা, কেননা বৃষ্টির দিনে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় রাস্তা গুলো
২। এই বিশ্ববিদ্যালয় মরুভূমির থেকে কোন অংশে কম নয়,এখানে বৃক্ষরোপণ করলেও পরিচর্যার অভাবে বেড়ে উঠে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পরিকল্পিত ভাবে গাছের চারা রোপণ করতে হবে এবং এর পর্যবেক্ষণের জন্য টিম গঠন করতে হবে , রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রেখে তারপর যেন করা হয় কেননা পরবর্তীতে গাছ গুলা কাটা পড়তে পারে
৩। এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটা অনুষদ আইন অনুষদ,আপনি হয়তো জেনে থাকবেন আইন অনুষদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সফলতম অনুষদ, প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি অনুষদের আলাদা ভবন থাকে,এখানে আইন অনুষদের যাবতীয় কার্যক্রম হয় সোশ্যাল সাইন্স ভবনে, যদিও আলাদা ফ্লোরে, আমি মনে করি আলাদা একটি অনুষদ হলে পড়াশোনা সহ যাবতীয় দিকে এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে।
৪। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গতানুগত নিয়মের বাইরে ডিজিটাল ও আধুনিক পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা
৫। প্রশাসনিক কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তিদের সব সময় মনিটরিং করা যেন দূর্নীতি রোধ সম্ভব হয়…
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের একটা পরিবার । একজন পরিবার প্রধানের কাছে অনন্য সদস্যদের যেমন অনেক কিছুই চাওয়া-পাওয়ার থাকে তেমনি ভাবে আমাদের অভিভাবক মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের কাছে থেকেও বেশ কিছু প্রত্যাশা আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করতেই পারি।
গবেষণা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা :-
শিক্ষার্থী রাহুল রাহা
সিএসসি বিভাগ
শিক্ষার্থীরা গবেষণা খাতে উপাচার্যের কাছে বেশ কিছু প্রত্যাশা কথা বলে। প্রত্যাশা সমূহ হলো :
গবেষণা সুযোগ: শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প এবং স্কলারশিপের সুযোগ বৃদ্ধি করা।
গবেষণার অবকাঠামো: গবেষণার জন্য উন্নত ল্যাব, গ্রন্থাগার এবং অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা।
মেন্টরশিপ: অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে গবেষণার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা এবং মেন্টরশিপ প্রদান।
অর্থায়ন: গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা এবং তহবিল প্রদান।
সেমিনার ও কর্মশালা: গবেষণা বিষয়ক সেমিনার, কর্মশালা ও কনফারেন্সের আয়োজন করা।
প্রকাশনা সুযোগ: গবেষণার ফলাফল প্রকাশের জন্য প্ল্যাটফর্ম এবং জার্নালের সুবিধা নিশ্চিত করা।
গবেষণার সংস্কৃতি: বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সক্রিয় গবেষণার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, যেখানে শিক্ষার্থীরা সহজে অংশ নিতে পারে শিক্ষার্থীদের গবেষণার সাথে সম্পর্কিত মতামত গ্রহণ এবং তা অনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়ন।
এই প্রত্যাশাগুলো শিক্ষার্থীদের গবেষণার মান ও সুযোগ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে বলে শিক্ষার্থীরা মতামত প্রকাশ করে।
মসজিদের ইমাম নিয়োগ,খাবারের মানোন্নয়ন এবং সেশন জট নিরোসন
শিক্ষার্থী মোঃ ইউসুফ আলী
আইন ও বিচার বিভাগ
মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া, মসজিদের দক্ষ ইমাম নিয়োগ থেকে শুরু করে দু’পাশে দুইটা ফটকের কাজ, বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ডাইনিংয়ের খাবারের মান উন্নতীকরণ, প্রত্যেকটি বিভাগকে সেশনজট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার স্কোপ বৃদ্ধি ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি শারীরিক শিক্ষা দপ্তর কতৃক আন্তবিভাগ টুর্নামেন্ট আয়োজন। যতটুকু সম্ভব প্রযুক্তি নির্ভর ও শিক্ষার্থী বান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলবেন এ টুকুই প্রত্যাশা।
এএকে /
মন্তব্য করুন