মোহাম্মদ এনামুল হোসেন:
এর্নেস্তো গেভারা দে লা সের্না। সারাবিশ্ব কেবলমাত্র যাকে চে নামেই চেনে। চে এক অবিনাশী বিপ্লবের নাম। সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছুটে গেছেন যিনি কিউবা, পেরু, কঙ্গো, কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা, পানামা, এল সালভেদর, ভেনেজুয়েলা, ভিয়েতনাম আর বলিভিয়ায়।
আমেরিকার বিপ্লবী ইতিহাসের জ্বলজ্বলে এই নক্ষত্রের জন্ম ১৯২৮ সালের আজকের এই দিনে ( ১৪ জুন) আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের রোসারিওতে। চে গেভারার শিরায় বইছিলো যেমনি আইরিশ রক্ত তেমনি স্পেনিস রক্ত। বাবা এর্নেস্তো গেভারা লিঞ্চ ছিলেন একজন আইরিশ অন্যদিকে মা সেলিয়া ডে লা সার্না ছিলেন স্পেনিয় এবং আমেরিকান এক অভিজাত জমিদার পরিবারের মেয়ে।
ছোটবেলা থেকেই চে ছিলেন চঞ্চল। শৈশব থেকেই সমাজের বঞ্চিতদের জন্য তার ভিতর মমত্ববোধ তৈরি হতে থাকে। সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার পরিবারে বেড়ে ওঠা চে খুব অল্প বয়সেই রাজনীতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।
১৯৪৮ সালে তিনি আর্জেন্টিনার ইউনিভার্সিটি অব বুয়েনস আয়ার্সের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যে ভ্রমণের নেশা গেভারাকে পেয়ে বসে। ১৯৫০ সালে মোটরসাইকেলে চেপে নিজের দেশকে দেখতে বেরিয়ে পড়েন। ভ্রমণের নেশায় ডাক্তারি পড়া শেষ না হতেই বন্ধু আলবার্তো গ্রানাদোর সাথে দক্ষিণ আমেরিকা দেখতে বের হয়ে যান তিনি। দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণকালীন চে সেখানকার শ্রমিক ও আদিবাসীদের বঞ্চনার জীবন এবং সমাজে শ্রেণীবৈষম্য খুব কাছ থেকে দেখে তার হৃদয়ে দাগ কেটে যায়।
বিপ্লবী এই মানুষটি ছিলেন একজন ভালো রাগবি খেলোয়াড়। বিপ্লবের আর ভ্রমণের ওপর তার লেখালেখির সংখ্যাও কম নয়। কিউবান ভাষায় তাঁর ৭০ টি নিবন্ধ রয়েছে। ছদ্মনামে রয়েছে আরও ২৫ টি নিবন্ধ। প্রায় পাঁচটির মতো বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন তিনি। চিঠি পাওয়া গেছে ৭০ টি। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত ভাষণ আর সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রায় ২৫০-এর কাছাকাছি।
১৯৫৫ সালের জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে মেক্সিকোতে তাঁর সাথে দেখা হয় কিউবার বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর। স্বৈরশাসক বাতিস্তাকে উচ্ছেদের জন্য কিউবায় বিপ্লবীদের পাঠানোর জন্য একজন চিকিৎসক খুঁজছিলেন ফিদেল। ফিদেলের প্রস্তাব পাওয়ার পর সম্মতি জানাতে এক সেকেন্ডও দ্বিধা করেননি চে। কিউবার পথই তাকে নিয়ে গিয়েছে কঙ্গো, কঙ্গো থেকে বলিভিয়া আর বলিভিয়া থেকে অমরত্বের সাম্রাজ্যে। গ্রানমা জাহাজ নিয়ে বিপ্লবের ডাক, কিউবায় মিশন, কঙ্গোতে বিপ্লবের জন্ম, বলিভিয়ার গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে সারা বিশ্বের মার্কসবাদী বিপ্লবীদের কাছে তিনি এক কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন।
মাত্র ৩৯ বছর বয়সে নিভে গিয়েছিল বিংশ শতাব্দীর এই খ্যাতিমান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীর জীবনপ্রদীপ। ৯ অক্টোবর, ১৯৬৭ সালে বলিভিয়ার লা হিগুয়েরা দেশটির সামরিক বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
জন্মদিনের নিরন্তর শুভেচ্ছা বিপ্লবের এই অগ্নিপুরুষকে!
ইএইচ/
মন্তব্য করুন