জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেছেন, একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তখন তার পুরোপুরি দায়িত্ব বিভাগের শিক্ষক ও চেয়ারপার্সনের ওপরে। ছাত্রকল্যাণেরেও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরুষ শিক্ষকের পাশাপাশি একজন নারী শিক্ষককেও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দায়িত্বে নিযুক্ত করা হবে। কারণ নারী শিক্ষার্থীরা পুরুষ শিক্ষকের সাথে কথা বলতে সব সময় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের আয়োজনে বিভাগটির শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার অকাল মৃত্যুতে অনুষ্ঠিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জবি উপাচার্য এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, নারীরা কেন আত্মহননের পথ বেছে নেয় তার অনেক কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সমাজ। এখন পর্যন্ত নারীরা মানুষ নয়, নারীরা পণ্য, নারীকে বুলিং করা যায়, নারীকে যখন যা ইচ্ছা তা বলা যায়। তাকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর আমিও বুলিংয়ের শিকার হয়েছি। এটি এখন রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সে বিষয়ে যাবো না। কারণ আমি বুলিং সহ্য করতে শিখে গেছি গত ৩০ বছর ধরে। কিন্তু অবন্তিকার মত একজন কোমলমতি শিশু সেটা নিতে পারার কথা নয়।
সাদেকা হালিম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আমি অনুরোধ করছি আপনারা ভাবতে শিখুন কেন আমাদের শিক্ষার্থীরা আত্মহননের পথ বেছে নেবে। অবন্তিকার মনে অনেক দুঃখ-কষ্ট ছিল। সে ছোট একটি ভুল করতেই পারে, ভুল আমরাও করছি। সে যে পরবর্তীতে একটি অভিযোগ দিয়েছিল চেয়ারপার্সনের মাধ্যমে সেটার কি হয়েছিল তদন্ত কমিটি আশা করি ভালোভাবে সেটি যাচাই করবেন।
জবি উপাচার্য বলেন, একজন শিক্ষার্থী যখন অভিযোগ দেন তখন সেটা চেইন অব কমান্ড ধরে যায়। কী কারণে অবন্তিকার দেওয়া অভিযোগের বিষয়ে গাফিলতি ছিল সেটা জানতে হবে। আমি জানি না এরপরও অবন্তি বেঁচে থাকতো কিনা। কিন্তু আমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে পারতাম, যে প্রশাসন তার কোনো কাজে গাফিলতি করেননি। কিন্তু আমি ভীষণভাবে দগ্ধ।
ড. সাদেকা হালিম বলেন, অবন্তিকার বাবা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক ছিলেন। অবন্তিকা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। যে কলেজে আমার বাবা শিক্ষার্থী ছিলেন। একটি মেয়ে অনেক কষ্ট করে বড় হয়। তার বাবা-মা তার প্রতি অন্যভাবে বিনিয়োগ করে। সমাজের চক্ষুকে এড়িয়ে তাকে ঢাকায় পাঠান পড়াশোনার জন্য। ঢাকায় তাকে মেসে থাকতে হয়,তাকে হলে থাকতে হয়। তাকে রাস্তা ক্রস করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হয়।
তিনি বলেন, অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে যে সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক পর্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে সেটা ছাড়া উপায় ছিল না। সেগুলো নিতেই হতো। জবির তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন দ্বারা পরিচালিত, কমিটির সদস্যরা নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করবেন। একটি তদন্ত একদিনে হয় না, কারণ দ্রুত গতিতে তদন্ত করলে তখন নানাবিধ কথা উঠার সম্ভাবনা থাকে। যে প্রক্টরিয়াল বডি তখন ছিল তাদেরকেও জানাতে হবে যে কেন তারা সেই অভিযোগ হিমাগারে পাঠিয়ে দিলো, কী তাদের ব্যাখ্যা।
জবি উপাচার্য আরও বলেন, একজন সহকারী প্রক্টরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে। তার সহযোগীরা কী করছে এখন এসব বিষয় খতিয়ে দেখেই বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে হবে। আমরা চাই না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আর কোনো ঘটনা ঘটুক। আমি মেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েই থাকবো। অবন্তিকার ইস্যুতে আমি একটা জিনিস প্রশ্রয় দিব না, সেটা হচ্ছে এটা নিয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক খেলা কেউ খেলতে পারবে না। আমি কাউকে খেলতে দিব না।
এ সময় জবি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে ক্যাম্পাসের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ বক্সগুলো সংস্কার করে বিভিন্ন স্থানে নতুন বক্স স্থাপনের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি সেই বক্সের চাবিগুলো উপাচার্যের কাছে জমা দিতে বলেন। এখন থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী-পুরুষ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিপীড়নের অভিযোগ জমা দিতে পারবেন এবং উপাচার্য নিজেই বক্সগুলো খুলে অভিযোগগুলো দেখবেন বলে জানান সভায়।
জবির আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার আলী আককাসের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস এম মাসুম বিল্লাহ। এসময় বক্তব্য প্রদান করেন জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার বিভিন্ন বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং তারা দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো শিক্ষার্থী যেনো মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যতনের শিকার না হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভাগের চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসআই/
মন্তব্য করুন