শাবিপ্রবি প্রতিনিধি: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের দোসররা সাধারণ ছাত্র পরিচয়ে এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছেন। এমন অভিযোগ তুলে সকলকেই সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে হল ছেড়ে দিতে আল্টিমেটাম দেন। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অবস্থা স্বাভাবিক হলে সকলেই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হলে উঠতে পারবেন।
গতকাল সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে স্থানীয় লোকজন মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও নয়াবাজার এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে শাহপরাণ হলের সামনে অবস্থান নিয়ে এই আল্টিমেটাম দেন। তোপের মুখে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই হল ছাড়েন শিক্ষার্থীরা। এসময় এলাকাবাসী ‘ছাত্রলীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘খুনি হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ছাত্রলীগের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শুনা যায়।
তখন এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, আমরা সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যদি হলে ছাত্রলীগের কেউ থেকে থাকে তাদেরকে আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হল থেকে বাহির করবো। সেজন্য আমরা একটা গুগল ডক ফাইল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেখানে যারা যারা ছাত্রলীগের সাথে জড়িত আছে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের তথ্য দিবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই করে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এলাকাবাশী তাদের দাবিতে অনড় ছিল। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আহ্বানে কিছু শিক্ষক হলে গিয়ে এলাকাবাশীর তোপের মুখে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সবাইকে হল ছাড়ার প্রস্তাব দেন।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ হাসিনার আমলে ছাত্রলীগের দোসরেরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন অপরাজনীতির চেষ্টা চালিয়ে মানুষকে খুন, গুম হত্যার সাথে লিপ্ত ছিল। ছাত্রলীগের একটা চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে তৎপর চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়রা দাবি করেন। ছাত্রলীগের হয়ে যারা সামনের সারিতে কাজ করেছেন তারাও আজ সাধারণ শিক্ষার্থী সেজে আবাসিক হলে আওয়ামী লীগের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাই হলের সকল শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ছেড়ে দিতে হবে। নতুন প্রশাসন আসলে নিয়ম অনুযায়ী তারা আবার হলে উঠতে পারবে। তবে হঠাৎ এই সিদ্ধান্তে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সমন্বয়কদের সাথে শিক্ষার্থীরা মিটিং করেন। মিটিংয়ে সকলে মিলে যতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন না আসবে ততদিন নিজেরা সকলে মিলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন এই সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি গুগুল ডক ফাইল খুলে যারা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত আছে তাদের সকলের তথ্য সেখানে দেওয়ার আহ্বান জানান সমন্বয়করা। সেই অনুযায়ী যাচাই বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সেই মিটিংয়ে। তবে মিটিং শেষ হতে না হতেই এলাকাবাসী মিছিল নিয়ে দুই দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায় হেলমেট পরিহিত কিছু দুর্বৃত্তকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হল ছেড়ে যাওয়ার জন্য ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় নয়াবাজার হতে টিলারগাওঁ পর্যন্ত ছাত্রলীগ বিরোধী শোডাউন দেন স্থানীয়রা। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন আবাসিক ছাত্ররা।
এসএস/
মন্তব্য করুন