মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি: মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) নেকাব পড়ায় এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে পরীক্ষার হলে নেকাব খোলার বিষয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী শিক্ষার্থী।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেইসবুক গ্রুপের পোস্টে উল্লেখ করেছেন, পরপর দুইদিন পরীক্ষার হলে তাকে সবার সামনে নিকাব খুলতে জোরাজোরি করা হয়। শিক্ষকের এই আচরণের প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে অপমান করা হয় এবং হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানিয়েছেন, “ইসলামি শরীয়ায় কোথায় লিখা আছে মুখ ঢাকতেই হবে?” এই ধরনের কটূক্তি শুনতে হয়েছে। এছাড়াও তার নকল করার অভিযোগ তুলে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তাকে একপাশে নিয়ে চেক করার অনুরোধ করার পরও তাকে সবার সামনে নিকাব খুলতে জোরাজোরি করা হয়। নিকাব খুলতে নারাজ হওয়ায় তাকে বিভিন্ন কটুক্তি করা হয়। এই সময় তাকে বলা হয়- মুখ না খুলে ছবি উঠাও কিভাবে? এমন হলে পড়ার দরকার নাই, তুমি চলে যাও, তোমার পরীক্ষা বাতিল, তোমার মতো মেয়েরা পড়তে আসে কেন।
এই ঘটনায় তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, পর্দা করা মেয়েদের কী ভার্সিটিতে পড়ার কোনো অধিকার নাই?
ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কানিজ মরিয়ম আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন, তবে তিনি দাবি করেছেন ঘটনাগুলো অন্যভাবে কোড করা হয়েছে।
আলাদা জায়গায় নিয়ে ফেইস ভেরিফিকেশনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিশার পরীক্ষার সিটের অনেক পর একজন ছেলে শিক্ষার্থীর সিট। ঐ জায়গায় অন্যকেউ তার ফেইস দেখার সুযোগ ছিল না তাই পরীক্ষা কেন্দ্রেই তাকে ফেইস দেখাতে বলা হয়।
শিক্ষার্থী সাচ্ছন্দ্যবোধ না করে একপাশে যেয়ে ভেরিফিকেশনের অনুরোধটি কেন রাখা হলো না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইরে নিয়ে ফেইস ভেরিফিকেশনের আইন নাই এবং এতে অনেক সময় নষ্ট হবে।
তিনি আরও জানান, প্রশান্ত নামের তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী শিক্ষকদের উপস্থিতেই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে নকল আনার অভিযোগ ও অপমানজনক কথাবর্তা বলেছেন। এজন্য আগামী কর্মদিবসে এই কর্মচারীকে শোকজ করা হবে।
পরীক্ষা বাতিলের হুমকি ও অন্যান্য হুমকির ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব রূপক অর্থে বলা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে এক্সাম সিটেই ফেইস ভেরিফিকেশনে সহায়তা করেন। ইসলামী শরীয়য় পর্দার বিষয়ে বলেন, আমি এটা বুঝাতে চেয়েছি আমাদের ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া আর ইসলামী শরীয়াহ পরস্পর বিরোধী না।
ড. কানিজ মরিয়ম আক্তার আরও বলেন, বিভিন্ন বিভাগের নিকাব করা মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলেদের সাথে রিসার্চ করেন। এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসহ অনেক বিভাগের ছেলে-মেয়ে শিক্ষার্থীরা পুকুরসহ বিভিন্ন জায়গায় রিসার্চের কাজ করছেন, এমনকি রাত দশটা পর্যন্ত ল্যাবে কাজ করেন। শিক্ষার্থীরা আমাদের ছেলে- মেয়ের মতো। যদি কোনো শিক্ষার্থী ছেলে-মেয়ে একসাথে কোনো কাজ করতে আপত্তি করেন তাহলে শিক্ষার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী আমাদের সাধ্যমত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
ড. কানিজ আরও জানান, এখানে মিস কমিউনিকেশন হচ্ছে। এটা দূর করাট জন্য প্রয়োজন শিক্ষক – শিক্ষার্থী আড্ডা। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ শিক্ষক-শিক্ষার্থী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশা করছেন মত বিনিময় সভায় মিস কমিউনিকেশনের সমস্যাটা দূর হবে। এবং ফেইস ভেরিফিকেশনের জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকার সময়ই মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা করে ফেইস ভেরিফিকেশন করা হবে কিনা বা অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা সে সম্পর্কে আগামীকালের মত বিনিময় সভায় আলোচনা হবে।
এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই ঘটনাকে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন বলে মনে করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা আশা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার তদন্ত করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখবে।
এসআই/
মন্তব্য করুন