পাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনের সাথে জড়িত থাকা ছাত্রলীগের এক নেতাকে পরীক্ষায় পাশ করাতে বিভিন্ন অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুশফিকুর রহমান এবং ওই ছাত্রলীগ নেতা হলেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাইমুর রহমান ইমন। তিনি ব্যাবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী, তবে ইয়ার ড্রফ হওয়াতে তিনি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাস চালু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অনার্স ৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার পরিক্ষার কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. মুশফিকুর রহমান এবং উক্ত সেমিস্টারে তিনি ACT-4205 – Financial Reporting and Professional Issu কোর্সের ক্লাস শিক্ষক ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী উক্ত কোর্সে তিনি প্রথম পরীক্ষক ছিলেন। যেখানে ছাত্রলীগ নেতা নাইমুর রহমান ইমনকে তিনি ৩৮ নম্বর দেন এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক হিসেবে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব ৫২ নম্বর দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোনো কোর্সে দু’জন পরীক্ষকের প্রদত্ত নম্বরে মধ্যে ২০ শতাংশ মার্কের ব্যবধান হলে সেই খাতা তৃতীয় পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়। সে হিসেবে পাবিপ্রবির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলাম তৃতীয় পরীক্ষক হিসেবে খাতা মূল্যায়ন করে ১২ নম্বর দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরের সাথে তৃতীয় পরীক্ষকের দেওয়া নম্বরের মধ্যে যেটা কাছাকাছি থাকবে সেই নম্বরের সাথে গড় হবে। আর যদি তিনটার মধ্যে থেকে কাছাকাছি ২টা বের করা সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে তিন পরীক্ষকের দেওয়া নম্বর যোগ করে তার গড় করতে চূড়ান্ত ফলাফল বের করতে হবে।
তবে অধ্যাপক ড. মো. মুশফিকুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে পচ্ছন্দের ছাত্রকে পাশ করাতে সে খাতা পর্যায়ক্রমে ৪র্থ এবং ৫ম পরীক্ষকের কাছে পাঠান। যেখানে ৪র্থ পরীক্ষক পাবিপ্রবির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন খাতা মূল্যায়ন করে ১০ নম্বর দেন। তবে ৫ম পরীক্ষককে অধ্যাপক ড. মো. মুশফিকুর রহমান রেজুলেশন দেখাতে ব্যার্থ হলে তিনি উক্ত খাতা দেখতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে জানাজানি হয় এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক ড. মো. মুশফিকুর রহমান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরিক্ষা কমিটিকে তথ্য গোপন করে এমনটা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম ভঙ্গ করে পরিক্ষার খাতা ৪র্থ ও ৫ম পরীক্ষকের কাছে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন না জানায় আমার ভুল হয়েছে এটা আমি স্বীকার করছি। তবে এমনটা যে আমি ইচ্ছা করে করেছি তা ভাবার সুযোগ নেই। আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকে খোজ নিলে, কন্ট্রোলার আমাকে জানায় ৩য় পরীক্ষক খাতা মূল্যায়নের পরও যদি সমাধান না হয় তাহলে আবার অন্য শিক্ষকের কাছে খাতা মূল্যায়নের জন্য দেওয়া যাবে। এজন্য আমি এমনটা করেছি।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জটিল করার কিছু নাই। আমরা প্রথম ৩ জন পরীক্ষকের নম্বর নিয়ে এটার সমাধান করেছি।
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের দায়িত্বে থাকা তৌহিদা খানম বলেন, মুশফিক স্যার আমাকে এমন একটা সমস্যা নিয়ে কল দিয়ে পরামর্শ চেয়েছিলেন। তবে আমি তাকে নিয়মের মধ্যে থেকে খাতা মূল্যায়ন করতে বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের বাহিরে কথা বলার এক্তিয়ার আমার নাই।
বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে পাশ করানোর জন্য নিয়ম ভেঙে ৫ম পরীক্ষক পর্যন্ত যাওয়া এটা বড় ধরনের একটা একাডেমিক ক্রাইম। উনারর মত একজন সিনিয়র শিক্ষকের থেকে এটি কাম্য নয়।
এএকে /
মন্তব্য করুন