আকবর আলী রাতুল, বেরোবি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ‘এ’ (বিজ্ঞান) ইউনিটের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার কেন্দ্রে ঘড়ি অচল থাকায় সময় জানতে পরীক্ষার্থীদের বিড়ম্বনায় পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াত মামুদ ভবন, একাডেমিক ভবন-২, একাডেমিক ভবন-৩ ও একাডেমিক ভবন-৪ এর ৬৩টি কক্ষে নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষার শেষে বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলের ঘড়ি অচল থাকার বিষয়ে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে একাডেমিক ভবন-৩ এর ১০৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দেওয়া রেজওয়ানুর রহমান নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা মোটামুটি ভালোই হয়েছে। তবে পরীক্ষার হলে থাকা ঘড়িটি নষ্ট থাকায়, সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। আমার মতো পরীক্ষার্থীদের, যাদেরকে এমন এক ঘণ্টায় ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তাদের কথা মাথায় রেখে এ দিকটিতে আরও নজর দেওয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠাকুরগাঁও থেকে আসা আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, আমাদেরকে যেহেতু ডিজিটাল ঘড়ি নিয়ে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না; সেহেতু হলে সচল দেয়াল ঘড়ি থাকা অত্যন্ত জরুরি। কেননা গাণিতিক ও অন্যান্য হিসাব করে এক ঘণ্টার মধ্যে ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় ব্যবস্থাপনার দিকটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, কোনো রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াই আজ (শনিবার) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জিএসটি গুচ্ছভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামীতেও আমরা এমন সুন্দরভাবে পরীক্ষা আয়োজনে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ সময় পরীক্ষার হলে ঘড়ি নষ্ট থাকার পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু জেনেছি, আগামীতে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।”
উল্লেখ্য, এর আগে পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, এবার ২৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ফলে শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াতের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। এ সময় তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের জন্য সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে বলে দাবি করেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মজিব উদ্দিন আহমদ, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ মোরশেদ হোসেন, প্রক্টর মোঃ শরিফুল ইসলাম, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম, বহিরাঙ্গন কার্যক্রম দপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ভর্তি পরীক্ষায় রংপুর বিভাগে মোট ১৬ হাজার ২৬২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর। সকালের পরীক্ষার পর শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় আর্কিটেকচার বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি নগরীর সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ২৬২, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে ৩ হাজার ৫০০, দি মিলিনিয়াম স্টারস স্কুল এন্ড কলেজে ১ হাজার ৫০০, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ১ হাজার, রংপুর সরকারি কলেজে ১ হাজার ৫০০, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজে ৩ হাজার ৫০০ এবং কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৬৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
প্রসঙ্গত, জিএসটি সমন্বিত ভর্তি কমিটি সূত্রে জানা যায়, ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এ বছর ‘এ’ (বিজ্ঞান) ইউনিটে এক লাখ ৭০ হাজার ৫৯৯ জন, ‘বি’ (মানবিক) ইউনিটে ৯৪ হাজার ৬৩১ জন এবং ‘সি’ (বাণিজ্য) ইউনিটে ৪০ হাজার ১১৬ জন আবেদন করেছেন। মোট ৩ লাখ ৫ হাজার ৩৪৬ জন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন।
আগামী ৩ মে ‘বি’ ইউনিটে মানবিক ও ১০ মে ‘সি’ ইউনিটে বাণিজ্য বিভাগ থেকে আবেদনকৃত শিক্ষার্থীদের বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এসআই/
মন্তব্য করুন