রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গতরাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত ৬টি ককটেল বিস্ফরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতেই দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে।
শনিবার (১১ মে) রাত ১২টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল ও মাদার বখ্শ হলের মধ্যবর্তী স্থানে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর,ছাত্র উপদেষ্টা এবং উপ-উপাচার্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
হল সূত্রে জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বসাকে কেন্দ্র করে হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী সোহরাওয়ার্দী হলের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমানের কথা-কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আতিকুর রহমানের কক্ষে ভাংচুর চালানো হয়। পরে ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে নিয়াজ মোর্শেদের ছাত্রলীগের কিছু কর্মী হলে প্রবেশ করেন।
এ ঘটনার পর রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের প্রায় তিন শতাধিক নেতা-কর্মী মাদার বখ্শ হলের সামনে অবস্থান নেয়। পরে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় এবং একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ হতে থাকে। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের মহড়াও দিতে দেখা যায়। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
এরপর সকালে সাড়ে ছয়টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান, কর্মী শামসুল আরিফিন খান সানি এবং আজিজুল হক আকাশসহ আরও কয়েকজন প্রতিপক্ষকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার অভিযোগে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের কর্মচারীকে মারধর করে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ মহড়া দেয়।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে, মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল আলম তন্ময় বলেন, গতকাল সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত হওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাসে একটি ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। সংঘাতের কারণে অনেক পুলিশ ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাম্য নয়। এ ধরণের সংঘাতের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যপক বিঘ্নিত হচ্ছে, যা কখনো উচিত নয়। আমি চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার একটি সুন্দর পরিবেশ, কোনো ধরণের সংঘাত নয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদুর রহমান ফাহিম বলেন, ক্যাম্পাস শিক্ষার জায়গা, শিক্ষার্থীদের জায়গা। শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কোনোকিছুর জন্য কেউ ক্যাম্পাসের মাটি ব্যবহার করলে প্রশাসনকে তা কঠোর হস্তে দমন করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক যেকোনো অপরাজনৈতিক কর্মসূচি ও সংঘর্ষ হানাহানি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক গতিধারা এবং শিক্ষার্থীদের মুক্তচিন্তা চর্চা ও বিকাশে ব্যাপক বাঁধাগ্রস্ত করে। তাই ছাত্র সংগঠনগুলোকে নমনীয় ও শিক্ষাবান্ধব হতে হবে।
স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজিব বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষের ফলে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। এমতাবস্থায় রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে এ পরিস্থিতি নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃঢ় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এসআই/
মন্তব্য করুন