রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে গত ১১ মে রাতে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। ঘটনাটি তদন্ত করতে গঠন করা হয় তিন সদস্যের কমিটি। গতকাল রাতে তদন্ত রিপোর্টের একটি কপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে এক শিক্ষার্থীর আবাসিকতা ও দুইজনের ছাত্রত্ব বাতিলসহ মোট ৮টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
আবাসিকতা বাতিলের সুপারিশ করা হয় সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. আতিকুর রহমানের। অন্যদিকে নিরাপত্তা কর্মীকে মারধরের অভিযোগে মাদার বক্স হল ছাত্রলীগ কর্মী ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুল আরিফিন খান সানি এবং একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ও মতিহার হল ছাত্রলীগ কর্মী আজিজুল হক আকাশের ছাত্রত্ব বাতিলের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. ১১ মে, ১২ মে ও ১৩ মে হোসেন সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্র সংগঠনের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের প্রকৃত ঘটনা ‘গোয়েন্দা সংস্থা’র মাধ্যমে অনুসন্ধান করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া।
২. হলে অবস্থানরত অবৈধ, অনাবাসিক ও বহিরাগতদের হল ছাড়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে তল্লাশী চালিয়ে হল ত্যাগের নির্দেশ, তারপরও হল ত্যাগ না করলে গ্রেফতারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩. হলের নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুলকে বেধড়ক পেটানোর ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়া, সবুজ বিশ্বাসের উপর নির্যাতন, ক্যান্টিনে ৪৬,৮২০/- টাকা পরিশোধ না করা, হল প্রশাসনকে হুমকি প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৯৪ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আতিকুর রহমানের আবাসিকতা বাতিল করা, হল ত্যাগের নিদের্শ প্রদান।
৪. আতিকের নেতৃত্বে বহিরাগত শামসুল আরিফিন খান সানি, আজিজুল হক আকাশসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও হলের নিরাপত্তা প্রহরী মনিরুলকে দায়িত্বরত অবস্থায় বেধড়ক পেটানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান।
৫. হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের নেতৃত্বে পরবর্তীতে কোনো অনভিপ্রেত ঘটনার সূত্রপাত না ঘটে এ বিষয়ে হল প্রশাসন মৌখিকভাবে তাকে সতর্ক করবে এবং হলে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট ও শৃঙ্খলা বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও যেনো প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
৬. কোনো ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা বা অন্য যে কেউ অবৈধভাবে শিক্ষার্থীকে হলে উঠালে তার বিরুদ্ধে হল প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিবে তা তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকরে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
৭. হলে প্রতিরাতে ‘রুমওয়ার্ক’ নামে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধের জন্য ছাত্রসংগঠনকে কড়াকড়ি নির্দেশ প্রদান।
৮. হলের অতিথি কক্ষে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা থেকে বিরত রাখা।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ দিবাগত রাতে হলের গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। একদিকে ছিল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব অনুসারী অন্যদিকে ছিল সোহরাওয়ার্দী হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের অনুসারীরা। প্রায় চার ঘণ্টা সংঘর্ষ চলার পরে পরিস্থিতি শান্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। পরের দিন ১২ মে সকালে আবারও সোহরাওয়ার্দী হলের নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করে আতিকুর রহমান, সানি ও আকাশসহ আরও বেশ কয়েকজন। পরে হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। অবশেষে গতকাল রাতে এই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
এসআই/
মন্তব্য করুন