রাজিব রায়হান, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে ‘ধর্ষণ’ চেষ্টাকালে দুই বহিরাগত যুবককে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় ধর্ষণচেষ্টা মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী। তবে এ ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডের এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান।
আশুলিয়া থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (তদন্ত কর্মকর্তা) মো. নূর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (সংশোধিত) ২০০৩’ এ মামলা দায়ের করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থী। আটককৃত দু’জন ছাড়াও একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আটক হওয়া নাজমুল হাসান (৩২) সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) ক্যাফেটেরিয়ায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। আটক আরেকজন আলামিন (২৮) একই প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন প্রকল্পে দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে কর্মরত।
এদিকে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী জানান, আমার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুহুল আমিন ও আমি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনপুরা এলাকার দিকে যাচ্ছিলাম৷ এসময় অপরিচিত তিনজন যুবক আমাদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। তারা আমাদের সাথে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ও ২০ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় আমাকে কুপ্রস্তাব দেয় অন্যথায় আমাকে ও আমার বন্ধুকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রায় তিন ঘন্টা আটকে রাখার পর রুহুল আমিন সুকৌশলে টাকা আনার কথা বলে বন্ধুদের ফোন করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হল থেকে একদল শিক্ষার্থীরা গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে। সেসময় একজন ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীর সহপাঠী ও নিরাপত্তা শাখা সূত্রে জানা যায়, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাকি দুইজন ছিনতাইকারীকে গণপিটুনি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা সোপর্দ করে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ডেপুটি রেজিস্ট্রার) জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল বলেন, ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রক্টর মহোদয়কে অবহিত করেছি। পরে রেজিস্ট্রার মহোদয়ের অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে আটককৃতদের পুলিশের সোপর্দ করেছি।
তবে এই ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কিংবা প্রক্টরিয়াল বডির কাউকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর একটি অভিযোগপত্র আমরা পেয়েছি, যদিও-বা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়ে গেছে।
গতকালের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের কাউকে না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে পারিনি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের জানাযা শেষ করতে আসতে রাত ৮টা পেরিয়ে যায়। তবে সহকারী প্রক্টর কেউ উপস্থিত কেনো ছিল না সে ব্যাপারটি আমি দেখব।
এমন ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির অনুপস্থিতির ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রববানী বলেন, কার্যত প্রক্টর পরিবর্তন হলেও প্রক্টর বডির কোনো পরিবর্তন হয়নি। যেটি একটি ব্যর্থতা। এর দায় বর্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের উপর। তাদের উদাসীনতায় এমন অবস্থা।
এ ব্যাপারে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এসআই/
মন্তব্য করুন