রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কোটা সংস্কারের আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষকেরা তাঁদের ছাড়িয়ে নিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। সেসময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে এক সাংবাদিককে মারধর ও অপর এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, দুই সাংবাদিকের মধ্যে একজন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের রাজশাহী প্রতিনিধি মো. আমজাদ হোসেন এবং অপরজন সমকালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অর্পণ ধর।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে মৌন মিছিল ছিল। ‘ছাত্র-জনতার খুনিদের প্রতিহত করুন’ শিরোনামে মিছিলে শিক্ষকদের সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থীও অংশ নেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন শিক্ষকেরা। এরই ফাঁকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যেতে থাকেন। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা তাঁদের বাঁচাতে পুলিশের কাছাকাছি আসেন। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মতো ধস্তাধস্তি হয়। সে ঘটনাচিত্র ভিডিও করায় সমকালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অর্পণ ধরকে ডিবি পুলিশ মারধর করে লাঞ্ছিত করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ডেইলি ক্যাম্পাসের রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি আমজাদ হোসেনের আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তাঁর ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পিঠে একাধিক কিল-ঘুষি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
সমকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অর্পণ ধর বলেন, ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকে বেলা ১১টার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্ক ও বৈষম্য বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় আমি সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মারধর করে।’
অর্পণ আরো বলেন, ‘ডিবির এক সদস্য তাঁকে কাছে ডেকে নিয়ে যান। পরে আরেকজন তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তিনি পরিচয় দেওয়ার পরও এই কাজ তাঁরা অব্যাহত রাখেন। এতে তাঁর হাতের একটি অংশ কেটে গেছে। পরে পরিচিত পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে বলায় তাঁরা ছেড়ে দেন।’ ডিবি পুলিশের একজন বলছিলেন, ‘এই হচ্ছে বড় ইনফরমার। এরে তোল।’
এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস রাজশাহী প্রতিনিধি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আজকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকে বেলা ১১টার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্ক ও বৈষম্য বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি পালন করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চড়াও হোন আমাকে মারধর করে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেও আমার আইডি কার্ড ছিঁড়ে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনে কিছু বাইরের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এসেছিলেন। তাঁরা পুলিশের দিকে জুতো ছুড়ে মেরেছিল বলে জেনেছেন। পরে শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়েছেন। সাংবাদিকদের হেনস্তা করার ঘটনা ঘটে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এখানে এমন কিছু হয়নি। এখানে ওনারা শান্তিপূর্ণ ছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই আছেন। দুই-তিনজন শিক্ষার্থী বের হয়ে এসে আমাদের পুলিশের সঙ্গে হটটক করে। তাঁরা একজনের (পুলিশ) গায়ে হাত তুলছিল। তাই তাঁদের ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল। ওরা ছাত্র না, বহিরাগত। তাঁরা কেন হাত তুলতে গেল।’
তখন সাংবাদিকদের মারধর করে ফোন কেড়ে নেওয়া হলো কেনো জানতে চাইলে হেমায়েতুল ইসলামকে বলেন, ‘বাস্তবে এখানে তো এ ধরনের কিছু হয়নি।
কিন্তু ডিবি কেন টানাহেঁচড়া করল?’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেমায়েতুল ইসলাম একই কথা বলেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সাংবাদিকদের মারধর করা হয়েছে বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।
ইএইচ/
মন্তব্য করুন