গবি প্রতিনিধি:
রেজিস্ট্রার অপসারণকে প্রধান দাবি করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নীতি প্রতিষ্ঠায় ক্যাম্পাস সংস্করণে ২১ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বরাবর শিক্ষার্থীরা তাদের ২১ দফা উপস্থাপন করেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ হলো:
১. নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করায় প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষিবিদ সদ্দার তাসাদ্দেক আহমেদ (এস তাসাদ্দেক আহমেদ) বিবৃতি দিয়েছিল তা মূলত নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর হয়রানি ও জুলুমের সামিল। কোন অন্যায়কারীকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে সাধারণ শিক্ষার্থী দেখতে চায় না তাঁকে অনতিবিলম্বে বহিষ্কার এবং আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
২. জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় ‘ছাত্র সংসদ’ নির্বাচন দিতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের ওপর অন্যায় ও অন্যায্য, মনগড়া স্বার্থহাছিলের জন্য নিয়ম কানুন চাপিয়ে দেওয়া, বিভিন্ন দুর্নীতি ও জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা, অস্বচ্ছ ও স্বজন প্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িতে থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টা সিনিয়র সহকারি রেজিস্ট্রারের দ্রুত সময়ের মধ্যে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
৪. বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দিয়েছেন তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বহিষ্কার করতে হবে।
৫. অযোগ্য প্রক্টরিয়াল প্যানেল বিলুপ্ত ঘোষনা করতে হবে। (সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনে অপরাগতা, ছাত্র- শিক্ষক সমস্যা সমাধানে অপারগতা, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।)
৬. সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেমিষ্টার ফী হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রায় সব বিভাগেরই কোনো কারণ উপস্থাপন ছাড়াই। পূর্বের অবস্থায় দ্রুত ফিরে যেতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওয়েভার ব্যাবস্থা করোনাকালীন সময়ের পূর্বের ন্যায় চালু করতে হবে। সেমিস্টারের টিউশন ফি দেরিতে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ জরিমানা ৫০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চা ৫০০ টাকায় কমিয়ে আনতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান, গবেষণা ও উদ্ভাবন বাড়াতে সকল বিভাগে যোগ্য, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। একইসঙ্গে প্রতিটি বিভাগে অধ্যাপক পদমর্যাদার কমপক্ষে একজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৮. ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নির্দেশ দিয়ে যাওয়া নাট্য ও চারুকলা বিভাগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ অতিবিলম্বে চালু করতে হবে।প্রস্তাবিত দুটি হল দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যেগ নিতে হবে। আগামি সেপ্টেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে।
৯. সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে সিন্ডিকেট থেকে শুরু করে সমস্ত কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১০. গণস্বাস্থ্য ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ব্যাংক পূণরায় চালু করতে হবে এবং পূর্বে দূর্নীতির সাথে জড়িত সকল ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১১.বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক মিলানায়তন, শহীদ মিনার ও মুক্তমঞ্চ নির্মাণ করতে হবে।
১২. কোনো শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কোনো কমিটি/ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য নিয়োজিত থাকতে পারবে না এবং প্রতিবছর নতুন কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক স্হানান্তর করতে হবে। একই ব্যাক্তি একটানা দ্বিতীয় মেয়াদে একই কমিটিতে থাকতে পারবে না। পূর্বে দ্বায়িত্বরত কোনো ব্যাক্তি অপরাধী থাকলে বা দূর্ণীতির সাথে জড়িত থাকলে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
১৩. দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে দেশের মানুষের কাজে নিয়োজিত করতে, উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে উভয় প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্য শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
১৪.সাংস্কৃতিক ও মানসিক বিকাশ, বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।
১৫.বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি কমনরুম সুবিধা বাড়াতে হবে।
১৬. মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কমন রুমের ব্যবস্থা করতে হবে। (বিভিন্ন ধর্মালম্বী মেয়েদের জন্য উপাসনালয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।)
১৭. বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের অবকাঠামো রক্ষার জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সেগুলো মনিটরিং করতে হবে।
১৮. নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টার স্থাপন করতে হবে।
১৯.শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অন্তত চার রুটে নিয়মিত বাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, ক্যান্টিনকে আধুনিকায়ণেরর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত করতে হবে
২০. বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে প্রশাসন থেকে শুরু করে সমস্ত বিভাগে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতি, অব্যবস্থাপনা কিংবা জুলুমের অভিযোগ রয়েছে সেসকল অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করতে হবে। প্রমাণ সাপেক্ষে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে নতুন পথচলার সূচনা করতে হবে।
২১.বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষক ছয় মাসের সেমিস্টারে পাঁচ-ছয়টি ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করে এবং এক্সামের পূর্ব মহূর্তে শুধুমাত্র সাজেশনের নামে শিক্ষার্থীদেরকে প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
/ইএইচ
মন্তব্য করুন