ডয়েচে ভেলে বাংলা: শুক্রবার কী হয়, তা পর্যবেক্ষণ করবে সরকার৷ ওই দিন ঢাকায় বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ‘হাইপ্রোফাইল’ বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, শুক্রবার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলে কারফিউ তুলে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার৷
গত শুক্রবার অর্থাৎ ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর ভয়াবহ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা৷ দ্য ডেইলি স্টারের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই সংঘর্ষে কেবল ঢাকাতেই ৫৫ জন নিহত হন৷ এ ছাড়া, দেশের বিভিন্ন জেলায় নিহত হন আরও ১১ জন৷ আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, আগামীকাল সহিংসতার ঝুঁকি রয়েছে এবং এ বিষয়ে দলটির নেতাকর্মীরা সতর্ক থাকবে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে৷
শুক্রবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দলটি৷
খুলে দেয়া হতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধাবারের বৈঠকে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের তৈরি করা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকা ছাড়া সব জেলায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে মত দেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা৷
অন্যান্য জেলায় শুক্রবারের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে৷
বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘‘আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনতে চাই৷কারণ, নতুন পাঠ্যক্রমের জন্য তাদের শ্রেণীকক্ষে উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন৷ চারটি জেলা ছাড়া বাকি সব জায়গায় আমরা স্কুল খুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছি৷ আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেবো৷”
ব্যাপক সংঘর্ষের মধ্যে গত ১৬ জুলাই থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার৷ শিক্ষা বোর্ডগুলো ১৮, ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে৷
আগামী ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করেছে শিক্ষা বোর্ড৷ বৃহস্পতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ফের জানিয়েছে, ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্টের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে৷
বুধবার বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালুর জন্য অনুকূল নয়৷ তিনি জানান, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ করাই এখন অগ্রাধিকার পাবে৷
আন্দোলনকারীদের নামে আরো ১১ মামলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আরও ১১টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে ৯টি মামলার বাদী পুলিশ৷ দুইটি মামলার বাদী ছাত্রলীগের দুই নেতা৷ এসব মামলা ১২ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে হয়েছে৷
শাহবাগ থানায় করা মামলাগুলোর কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, একটি মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র আকতার হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ আকতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক৷ তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৭ জুলাই গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷
এই কর্মসূচিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়৷ এই সংঘর্ষের আগেই আকতারকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তার বিরুদ্ধে মামলাটি হয় ১৮ জুলাই। এ মামলায় নাম উল্লেখ করা একমাত্র আসামি তিনি৷ অন্য আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি৷ মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘‘অজ্ঞাতনামা বহুসংখ্যক কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সমর্থনে আন্দোলনকারীরা৷”
পুলিশের করা ৯টি মামলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তার জানামতে কোনো শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়নি৷ আইন অনুযায়ী, মামলাগুলো তদন্ত করে আইনভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে৷
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে কোথায় কে হামলা চালাবে—বিএনপি সেই নীলনকশা আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সমন্বয় সভায় তিনি এ কথা বলেন৷
বিএনপি বেছে বেছে নতুন নেতৃত্বের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পদায়ন করেছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘‘(কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে) এই হামলা পরিচালনার জন্য তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে নিয়োগ করা হয়েছে; কোথায় কে হামলা চালাবে, কোথায় কারা পেছন থেকে সহযোগিতা করবে—সব কিছু আগেভাগে নীলনকশা প্রস্তুত ছিল৷”
তিনি বলেন, ‘‘মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবারও উসকানি দিচ্ছেন৷ কেউ আগুন নিয়ে খেলবেন না, দায়িত্বশীল আচরণ করুন৷”
দেশবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, ‘‘গুজব একটি সন্ত্রাস৷ মাদকের মতো গুজব আপনার সন্তানকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিতে পারে৷ কাজেই এই গুজব-গুঞ্জন প্রতিরোধ করতে হবে৷”
এসআই/
মন্তব্য করুন