এডুকেশন টাইমস
৪ জুলাই ২০২৪, ৩:১৮ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

চাকরিতে কোটা পদ্ধতি অযৌক্তিক ও মেধার অবমূল্যায়ন: শিক্ষার্থীদের ভাবনা

ফরহাদ হোসাইন হিমু, কুবি: বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় কোটা সংস্কার। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে সারা দেশ উত্তাল। ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন, মিছিল এবং সমাবেশ করছে। সরকারি চাকুরিতে ৫৬% কোটা বাতিলের দাবিতে দেশের সকল শিক্ষার্থী একাত্মতা পোষণ করেছে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল ‘যথাযথ’ ঘোষণা করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

কোটা সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সম্পূর্ণ কোটা বাতিলের পক্ষে। তাদের দাবি কোটা পদ্ধতির কারণে মেধার অবমূল্যায়ন এবং সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। ঢাবি, জাবি, রাবি, কুবি, বেরোবি এবং চুয়েটের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতি নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন। সেগুলো তুলে ধরেছেন এডুকেশন টাইমস’র কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফরহাদ হোসাইন হিমু

কোটা ব্যবস্থায় মেধাবীরা বঞ্চিত

এই কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। এই ব্যবস্থা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, কারণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ছাড়াও এখানে মূলধারার শিক্ষার্থীরাও কোটা সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু সংবিধানে সুযোগের সমতার কথা বলা হয়েছে। কোটা ব্যবস্থার কারণে সবক্ষেত্রেই মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে।

মোকছেদুল ইসলাম

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা পদ্ধতির কারণে যোগ্যতার অবমূল্যায়ন সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে

মেধাবী প্রার্থীরা কোটার কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। কোটা পদ্ধতিতে যোগ্যতার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। কোটার কারণে সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে।

বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬% কোটা রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ অনস্বীকার্য। তবে এ ধরনের কোটার মাধ্যমে কি সত্যিই তাঁদের অবদান পূরণ করা সম্ভব? বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে, তাদের পরিবারকে সঠিক সহযোগিতা প্রদান করা উচিত। তবে কোটার মাধ্যমে নয়, বরং মেধা ও দক্ষতার ভিত্তিতে সকলকে সমান সুযোগ দিয়ে একটি সুষ্ঠু নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

মুবাশশির আল কাশশাফ

কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগ,

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

মেধা এবং যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করা

মেধা এবং যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন নিশ্চিত করা উচিৎ। কোটা কখনই একজন মানুষের মেধা এবং যোগ্যতা বাড়ায় না। একজন চাকুরিপ্রার্থী মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ না পেয়ে যদি কোটার সাহায্য চাকরি পায়। তার মানে এটাই, যে ওই প্রার্থী ওই পদের জন্য কখনই যোগ্য না। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোনো অযোগ্য লোক নিয়োগ পেলে সেটা দেশের ভবিষ্যতের জন্যও ভয়ংকর বিপদ নিয়ে আসবে। কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করি।

মাছুমা ইয়াসমিন জিম

প্রাণীবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

তৃতীয় প্রজন্মের ৩০% কোটা পাওয়া অযৌক্তিক

বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৩০% বরাদ্দ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ অনস্বীকার্য। মহান মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তীতে এক প্রজন্ম পর্যন্ত তাদেরকে যথাযথ সুযোগ সুবিধা দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত। তাই চাকরিতে তারা কোটার অধিকার রাখে। কিন্তু ৩য় প্রজন্ম কেন, কোন যুক্তিতে ৩০% কোটা পায় তা আমার জানা নেই। এটা সম্পূর্ণভাবে মেধার অবমূল্যায়ন, যোগ্যতার অবমূল্যায়ন।

যে বৈষম্য দূর করার জন্য একটা প্রজন্ম শহীদ হলো। একই রকম বৈষম্য তাদের ৩য় প্রজন্ম তৈরি করছে। এ স্বাধীনতার যথার্থতা কোথায়? হিসাব তো এরকম যেন, ৭১ এর আগে পাকিস্তানিদের কাছে বৈষম্যের শিকার, আর বর্তমানে দেশীও কুচক্রের কাছে।

এই যদি হয় স্বাধীনতার স্বাদ, সাধারণ মানুষের জন্য ৪৪% আর কোটা ধারীরাই ৫৬%। খুব নিষ্ঠুর প্রশ্ন মনে জাগে, মহান মুক্তিযোদ্ধারা যে বৈষম্য দূর করতে জীবনের পরোয়া করলো না। সাধারণ মানুষ কি সেই বৈষম্য থেকে বেরোতে পারলো?? এই কোটার সংস্কার চাই।

শাহরিয়ার হাসান

কম্পিউটার বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

অর্ধশত বছরে ৩০% কোটা রাখা অযৌক্তিক

যারা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে সেটাও স্বাভাবিক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অর্ধশত বছর পরও ৩০% কোটা রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। একদিকে উচ্চ ডিগ্রিধারী লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী বেকার। আরেকদিকে কোটায় ৩০% বৃদ্ধি মানে চাকরির ক্ষেত্রে আরও বৈষম্য সৃষ্টি করবে। একেই তো সরকারি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না,কর্মসংস্থান বাড়ানো হচ্ছে না,বেকারত্ব কমানো হচ্ছে না। তারওপর আবার কোটায় ৩০% বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিক্ষায়, চাকরিতে আরও বৈষম্য সৃষ্টি করবে। এরফলে শিক্ষার্থীদের হতাশা, আত্মহত্যার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। এ ক্ষোভ কেবল চাকরির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যে বৈষম্য, সে থেকেই সৃষ্ট নয় বরং বেকারত্বের যে গ্লানি সেটা থেকে রেহাই পেতেও তাদের এই ক্ষোভ। ২০১৮ সালে হামলা, মামলা, নির্যাতন সহ্য করেও এই কোটায় শতাংশ কমানো হয়েছিলো। আবার নতুন করে এই সিদ্ধান্তের ফলে আমরা সারাদেশের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানাই। মুক্তিযোদ্ধাদের যে আদর্শ ছিলো বৈষম্য ঘুচিয়ে সবার জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। অথচ স্বাধীন দেশে এই কোটা পদ্ধতিই বৈষম্য সৃষ্টি করছে। তাই অবিলম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ বাতিল করতে হবে।

মারুফ শেখ

গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ,

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কোটা হটাও দেশ বাঁচাও

‘কোটা হটাও দেশ বাঁচাও’ স্লোগান এখন সময়ের দাবি।২০১৮ সালের অক্টোবরে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে কোটা বাতিল করে যে পরিপত্র জারি করা হয় তা গত ৫ জুন বাতিল করলে চাকরিক্ষেত্রে আবার ৫৬% কোটা ফিরে আসে।যা চাকরিক্ষেত্রে বড় বৈষম্যের সৃষ্টি করবে। আবার এই ৫৬%কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%।

আসলে কোটা পদ্ধতির সূচনা করা হয়েছিলো অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীকে চাকরিক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়া।তবে সরকারি চাকরিতে শুধু মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ৩০% কোটা দেওয়া এক বড় বৈষম্যের সৃষ্টি করে।১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করার পিছনে কারণ ছিলো দেশ থেকে বৈষম্য দূর করা।তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আবার কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হলে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়।যা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের পরিপন্থী।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথারীতি সম্মান রেখে বলছি তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কোটা ভোগের জন্য দেশ স্বাধীন করেননি।আর মুক্তিযোদ্ধা পরিবাররা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়।তাই চাকরিতে তাদের এ কোটার দাবিদার অযৌক্তিক।

তাই সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচিত শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা নয় চাকরিক্ষেত্রে যত অযৌক্তিক কোটা বিদ্যমান রয়েছে তা বাতিল করে সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা।

মো: শামসুজ্জামান

বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সিওয়াইবি জবি শাখার নেতৃত্বে ইস্রাফিল ও লাভলু

টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশে ২য় স্থানে চবি

কুবিতে সিওইউ সাইক্লিস্টের নতুন নেতৃত্বে মামুন- রাকিন

শিক্ষা ও গবেষণায় সৌদি ফাউন্ডেশনের বৃত্তি, দেবে ৬০ লক্ষাধিক টাকা

ক্যান্টিনের খাবারের দাম এবং মান নিয়ে অস্বস্তিতে বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

শাবিতে মাস্টারমাইন্ড ২.০ শীর্ষক ‘ন্যাশনাল কেস কম্পিটিশন’ উদ্বোধন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পাটাতনের নেতৃত্বে মাসুম-সায়েম

শাবিতে গণহত্যায় অর্জিত স্বাধীনতা শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী

এডিবি থেকে ৪০ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ

বিশ্বের ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা

১০

ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে বিকাশ

১১

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের অনুমোদন পাকিস্তান সরকারের

১২

গণ-অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন: শফিকুল আলম 

১৩

৪৬ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: প্রাপ্তি, প্রত্যাশা ও সংকট

১৪

বাকৃবির ফজলুল হক হলে তিন দিনের ফিস্টে উৎসবের আমেজ

১৫

জুরাইনে পুলিশের সঙ্গে অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ, ট্রেন চলাচল বন্ধ 

১৬

জানা গেলো পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন চলাচলের তারিখ

১৭

অভিজ্ঞতা ছাড়াই ২৫০০০—৩০০০০ বেতনে চাকরি আরএফএল গ্রুপে, দেবে ভ্রমণ ভাতাসহ নানান সুবিধাও

১৮

নিয়োগ দিচ্ছে বিএসআরএম গ্রুপ

১৯

যে কারণে ভারতে করিমগঞ্জের নাম বদলে শ্রী-ভূমি রাখা হলো

২০