এডুকেশন টাইমস
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯:২০ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

‘উচ্ছৃঙ্খল’ নেতাকর্মীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি

এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে জমি দখল, দোকান ও মার্কেটে চাঁদাবাজি এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলাসহ নানা অভিযোগ আসছে। কেন্দ্রীয় কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ উঠেছে। বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েও নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না দলটি। এমন ‘উচ্ছৃঙ্খল’ নেতাকর্মীদের নিয়ে এখন বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। তাদের কর্মকাণ্ড দলটির জন্য এখন গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে।

এসব ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতারা ক্ষুব্ধ এবং বিব্রত। অবশ্য সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কারও করেছে বিএনপি। সর্বশেষ গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কমিটি বিলুপ্ত এবং মুন্সীগঞ্জে দুজন ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতাকে দলের সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সংশ্লিষ্টদের থেকে এসব জানা গেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের পরিচয়ে বিভিন্ন স্থানে দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অন্যায় কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন হলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাদের অনেকেই হাইব্রিড এবং দলে অনুপ্রবেশকারী। যারা এতদিন দলের দুর্দিনে পাশে ছিল না, তারাই রাতারাতি দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়িয়ে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। এসব ব্যাপারে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। কেউ যদি কোথাও দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে, তাকে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেওয়া এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানাতে বলা হয়েছে।

বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের পরিস্থিতি এমন অবস্থানে গেছে যে, দলীয় নেতাকর্মীদের সামলানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বিব্রত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ পর্যন্ত শতাধিক নেতাকর্মীকে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেক নেতাকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, বিএনপিতে চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও বিশৃঙ্খলাকারীদের ঠাঁই নেই। কোনো চাঁদাবাজের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। যদি কোথাও কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে যায়, তাকে ধরে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।

এদিকে, তৃণমূল তো বটেই, কেন্দ্রীয় নেতারাও মানছেন না দলীয় শৃঙ্খলা। দলের নীতিনির্ধারকদের কড়া হুঁশিয়ারি ও নির্দেশনার পরও থামছে না অপকর্ম। বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। দলের চেইন অব কমান্ড তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে দলের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তী কমিটি ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নামে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসএম মামুন মিয়ার প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে। আলোচিত এস আলম গ্রুপের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নিতে সহযোগিতার অভিযোগে কপাল পুড়েছে এসব নেতার।

একই দিনে সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. কাউছার তালুকদার, একই ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জনি এবং ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক দল চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আলী মুর্তজা খানকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এসএম জিলানী এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া

ফেরিঘাট, মাছঘাট ও ট্রলারঘাট দখলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তারা বৈধ ইজারাদারের লোকজনকে মারধর করে ঘাট থেকে বের করে দিয়ে সেখান থেকে টাকা তুলছেন। উপজেলার কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন জনির নেতৃত্বে তার অনুসারীরা এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইজারাদার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এ সুযোগে কুমারভোগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাউসার তালুকদারের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের একটি দল ঘাটের সব ব্যবসা তাদের দখলে নেন এবং ইজারাদারদের লোকজনকে টাকা তুলতে বাধা দেন। ১৬ আগস্ট ঘাটের পার্কিং, ট্রলার ঘাট, দোকান, রেস্তোরাঁ থেকে তারা (কাউসারের লোকজন) নিজেরাই টাকা তুলতে শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে কেন্দ্রীয়ভাবে দলের প্রাথমিক পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত নেতারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বিভিন্ন দোকানে ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপজেলা পৌরসভা যুবদলের নেতারা চাঁদা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পৌর শহরে একটি রিকন্ডিশন্ড মোটরসাইকেলের দোকান ঘর ভাড়া নেওয়াকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে বিএনপির সাবেক এমপির লোকজন গত বৃহস্পতিবার দোকান মালিক ও ভাড়া নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। সেই দোকান ভাঙচুর ও দোকানের লোকজনকে মারধরও করেছেন। মারধরের খবরে শুক্রবার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে তালা ভেঙে দোকান খুলে দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চলে যাওয়ার পর বিএনপির সাবেক এমপির লোকজন ওই দোকানদারকে দেখা নেওয়ার হুমকি দেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালবেলাকে বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর ছাত্র-জনতার জীবন ও রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। এই বিজয় কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে দেওয়া হবে না। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করবে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো অন্যায় কাজে যুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অত্যন্ত কঠোর। এরই মধ্যে তার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। সুতরাং সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।

এসএস/

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

র‍্যাগিং প্রতিরোধে বেরোবিতে অভিযোগ বক্স স্থাপন

নতুন পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে আবু সাঈদ ও মুগ্ধের আত্মত্যাগের গল্প

সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ২৪ কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ

আদানির সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের চুক্তি বাতিল কেনিয়ার

সোনালী ব্যাংকের শিক্ষাবৃত্তির আবেদন শুরু

১৪ বন্ধুকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগে থাই নারীর মৃত্যুদণ্ড

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া, শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা: হাসনাত

সাত কলেজের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নিদের্শনা ঢাবির

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

শীতের শুরুতেই জাবিতে নৈশপ্রহরীদের শীতবস্ত্র উপহার দিলো ছাত্রশিবির

১০

ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে শাটল বাস সার্ভিস

১১

‘জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ’

১২

জাবিতে শিক্ষার্থীর মৃত্যু: দ্রুত বিচারের দাবিতে মশাল মিছিল

১৩

‘রাজশাহীর সমন্বয়ককে’ হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে

১৪

প্রেসি‌ডেন্ট’স রোভার স্কাউ‌টের সংবর্ধনা পেলেন বাকৃবির র‌বিউল

১৫

পাবিপ্রবিতে চোর সন্দেহে এক যুবক আটক

১৬

জবিতে আন্তঃবিভাগীয় খেলায় মারামারির জেরে ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৭

জাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মামলা দায়ের, তদন্ত কমিটি গঠন

১৮

তিন শতা‌ধিক নেতাকর্মীকে ব‌হিষ্কার ও ৫ শতা‌ধিককে শোকজ: ছাত্রদল সম্পাদক

১৯

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

২০