জাককানইবি প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি থেকে বাদ যায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। হলের ডাইনিং পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগকে দিতে হতো প্রতি বছরে কয়েক লক্ষ টাকা করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামীলীগের ক্ষমতা খাটিয়ে হল প্রশাসনের কাছ থেকে ডাইনিং এর টেন্ডার পান মাহফুজ নামের এক ব্যক্তি। পরে সে কয়েক দিন পরিচালনার পরে ব্যবসায় লস দেখা দিলে আল আমিন নামের এক ব্যক্তির নিকট মাহফুজ প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে মালিকানা ছেড়ে দেয়। যার পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে ৩লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এরপর ২ বছর পেরিয়ে গেলে আবারো নতুন করে হলের ডাইনিং এর টেন্ডারের আহ্বান জানানো হয়। এতে আবারও ছাত্রলীগ বাহিনী ৪লাখ টাকার দাবি করে। মোটা অঙ্কের এই টাকা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল মাহমুদ কায়েস এবং সাধারণ সম্পাদক রিয়েলকে দিতে না পারার কারণে তাদের হলের ডাইনিং থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় আল-আমিনকে । আবারও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আল আমিনকে সরিয়ে অন্য এক ব্যক্তিকে ডাইনিং পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এতে ডাইনিং পরিচালক নিজেদের ব্যবসার লভ্যাংশ টিকিয়ে রাখতে অনেকটা বাধ্য হয়েই পরিবেশন করেন নিম্নমানের খাবার। যা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হল প্রশাসনের উপর ক্ষুব্ধ। নিয়মিত খাবারের মনিটরিং না করার কারণে অসুস্থ পরিবেশে খাবার পরিবেশন, দামের সাথে খাবারের গুনগত মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা প্রশ্ন। কখনো পাওয়া যায় পোকামাকড়, কখনো বা পাওয়া যায় লোহার পেরেক, কখনো বা পাওয়া ঘাস,লতাপাতা সহ বিভিন্ন ধরনের উচ্ছিষ্ট।
খাবারের গুণগত মান এর বিষয়ে পপুলেশন সাইন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ত্বকি হাসনাত শুভ বলেন,আমি বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং এ ফার্স্ট ইয়ার থেকেই নিয়মিত খাবার খাই।এতদিন অবধি কোনোরকম খাওয়া গিয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে আমি হলের খাবার নিয়ে খুব-ই অসন্তুষ্ট এবং খাবারের মান অত্যন্ত বাজে হয়েছে। আমি কয়েকবার অভিযোগ জানানোর পরও তাদের খাবারের মানের কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। অবশেষে বাধ্য হয়েই বাইরে খেতে হচ্ছে আমাকে।
তবে ত্রুটিপূর্ণ খাবারের মান নিয়ে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে মানহীন খাবারের বিষয়টি নিয়ে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এবিষয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি দায়িত্ব পাওয়ার পর বর্তমানে খাবারের গুনগত মান ভালো রয়েছে এবং নিয়মিত তিনি হলের ডাইনিং মনিটরিং করছেন। প্রতিনিয়ত খাবারে মশা,মাছি এবং পোকামাকড়ের বিষয়ে তিনি বলেন, দেখেন আমাদের বাসা বাড়ির খাবারের ভিতর ও মাঝে মাঝে এধরণের ঘটনা ঘটে থাকে তার মানে এই না যে, আমাদের বাসার খাবারও খারাপ। তারপরও আমি ডাইনিং মালিককে ডেকে কিছুক্ষণ আগেই বলেছি যাতে খাবার গুলো মশারী কিংবা বড় কোন ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী হল গুলোতে মিল সিস্টেম চালু করা যায় কিনা এ বিষয়ে প্রভোস্টের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হলে জনবল কম হওয়ায় আমারা এটি দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করতে পারছি না। তবুও আমি পূজার ছুটির পর একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিবো যদি শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হয় এবং তারা নিজেরা পরিচালনা করে তাহলে আমরা হলের একটি অংশে সীমিত আকারে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করবো। পরবর্তীতে আমরা পরিস্থিতি দেখে পুরো ডাইনিং এর বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবো।
হলগুলোতে ভর্তুকি দিয়ে ভাত এবং ডাউল ফ্রি করা শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এবিষয়ে তার জানা নেই পরবর্তীতে যদি কোন সিদ্ধান্ত হয় তাহলে হল প্রভোস্টদের মাধ্যমে জানানো হবে। তবে আমি যতটুকু জানতে পেরেছি হলগুলোতে খাবারের গুণগত মান ভালো করার পাশাপাশি অন্যান্য যে সকল সমস্যা রয়েছে সে বিষয়ে হল প্রভোস্টদের সাথে ভিসি স্যারের একটি আলাপ আলোচনা হয়েছে এবং একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এবি/
মন্তব্য করুন