শাবিপ্রবি প্রতিনিধি: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (শাবিপ্রবি) গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বের করে এনে স্বতন্ত্রভাবে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা ও সেশনজট সমস্যা সমাধানে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে চার মাসে সেমিস্টার শেষ করাসহ মোট ৫দফা দাবি উত্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি উত্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.এম সরওয়াউদ্দিননের কাছে দাবি সম্বলিত একটি কপি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
বাকি তিনটি দফা হলো, বিগত আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার সাথে জড়িত এবং হলে অস্ত্র ও মাদকের সাথে জড়িত ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে, ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে উন্মুক্ত রিডিং রুমের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ সময় ৫টি দফা কেন গুরুত্বপূর্ণ এর ব্যাখ্যা প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।
শাবিপ্রবিকে গুচ্ছ থেকে বের করে স্বতন্ত্র ভর্তিভাবে বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা
শাবিপ্রবির নিজস্ব প্রশ্নপত্রের যে মান ছিল তা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কারণে নিশ্চিত করা হচ্ছে না। তাছাড়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনেক জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়া হওয়া তা শাবিপ্রবির জন্য উপযুক্ত নয়। যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। শাবিপ্রবি বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম। যদি শাবিপ্রবির গুচ্ছ প্রক্রিয়ায় থাকতে হয় সেটা হবে বুয়েট, ঢাবি তথা প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে। এছাড়া গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার ফলে আঞ্চলিকতা তৈরি হয় যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈচিত্র্য তৈরিকে বাধাগ্রস্ত করে। এজন্য শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা চায় গুচ্ছ প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসতে।
আগামী ৩ সেমিস্টার ৪মাস করে করতে হবে
কোভিড-১৯ এর ফলে এক বছর দুই মাস সময়, উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে দুই মাস, বাইশের বন্যায় একমাস ও সর্বশেষ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পাঁচমাস সময় শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বর্তমানে কোন বিভাগে ৬টি ও কোন বিভাগে ৭টি ব্যাচ চলমান রয়েছে। এতে ক্লাসরুম ও ল্যাবসহ প্রত্যেকটি জায়গায় সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সংকট হ্রাস করতে আগামী তিনটি সেমিস্টার ৪মাস করে করলে এই সংকট থেকে অনেকটা বের হয়ে আসা যাবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনে হামলাকারী এবং হলে অস্ত্র ও মাদকের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
আন্দোলন চলাকালীন ১৫জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যে হামলা চালিয়েছিল তারাই কিন্তু হলে মাদকের ব্যবসা করতো ও অস্ত্র দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। হামলাকারী এই নিষিদ্ধ সংগঠনের অনেকে বর্তমানে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয়ের মধ্যে আছেন। তারা মনে করছে আবারো কি ছাত্রলীগের পুনর্বাসন হচ্ছে কিনা। এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখি নাই। আমরা চাই যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক।
ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এখন আর ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার বয়সের সীমার মধ্যে নেই। তাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখার কোনো যুক্তি দেখছি না। আর মুক্তিযোদ্ধার নাতি নাতনিদের কোটা শাবিতে আগেও ছিল না। তাই এই কোটা রাখার যুক্তিযুক্ততা নেই।যদি রাখা হয় তাহলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ করে দেওয়া হবে। পোষ্য কোটায় যারা ভর্তি হয় তারা অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছে। এতে করে গ্রামের যারা কম সুবিধা পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে আসতে চায় তার সাথে অন্যায় করা হয়। তাই আমরা চাই মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্য কোটা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করা হউক।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে উন্মুক্ত রিডিং রুমের ব্যবস্থা করতে হবে
শাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় রিডিং রুমে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে আগ্রহী না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে লাইব্রেরির রিডিং রুমে নিজস্ব বই নিয়ে প্রবেশ করা যায় না। শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কিংবা অন্যান্য যে কোন প্রকার প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট কিছু বই থাকে যা নিয়ে প্রবেশ করা যায় না। এতে তারা লাইব্রেরির প্রতি আগ্রহ হারায়। তাই আমরা চাই অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে উন্মুক্ত রিডিং রুম স্থাপন করা হউক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এম সরওয়ারউদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ করতে আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নেব। আমরাও চাচ্ছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেশনজট সমস্যার সমাধান করতে। আশা করি খুব দ্রুতই এ সংকট থেকে উত্তরণ করতে পারব। লাইব্রেরি নিচে কয়েকটি অফিস আছে এগুলো স্থানান্তর করে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করে দিব।’’
এসএস/
মন্তব্য করুন