পারভেজ আলম: প্রথম যখন ছাত্র ইউনিয়নের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, তখন সংগঠনটির কর্মীদের প্রধান মাথা ব্যাথার বিষয় ছিল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। চায়ের দোকানের আড্ডা থেকে শুরু করে মাঠের আন্দোলনের কর্মসূচি, কর্মীদের পাঠচক্র থেকে শুরু করে জাতীয় বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে করা সেমিনার-সবক্ষেত্রেই ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান ইস্যু ছিল শিক্ষাব্যবস্থা। প্রতি বছর বাজেট প্রকাশিত হওয়ার পর ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান সমালোচনা থাকতো শিক্ষা বাজেটের ঘাটতি নিয়ে। এবং সারা বছরই তারা শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির পক্ষে রাজনৈতিক মত ব্যক্ত করতো।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাকে প্রচণ্ড বিষন্নতা ও নিহিলিজমের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ফলে, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কম বয়স থেকেই মাথাব্যাথা ছিল আমার। এককালে যে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম, তার অন্যতম কারন ছিল শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাদের আগ্রহ। অবশ্য তখন ছাত্রফ্রন্টও খুব পিছিয়ে ছিল না। শিক্ষা বিষয়ক দাবিদাওয়াগুলাকে এই দুই ছাত্র সংগঠন এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল যে সিপিবি এবং বাসদ দল দুইটি শিক্ষাকেন্দ্রীক আন্দোলন সংগ্রামকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করতো। এটা ছিল সেই সময়, যখন এ এন রাশেদা নিয়মিত শিক্ষাবার্তা প্রকাশ করতেন।
ঐ ছাত্র ইউনিয়ন আর জীবিত নাই। দুই টুকরার কোনো টুকরাতেই নাই। যদি ঐ ছাত্র ইউনিয়ন আজও জীবিত থাকতো, তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তি সময়ে শিক্ষা সংস্কারে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন হইতো ছাত্র ইউনিয়ন।
আসলে এই ব্যাপারটা খেয়াল করে মনকষ্ট পাচ্ছি বেশকিছুদিন ধরেই। কিন্তু যেহেতু দলটার নতুনদের সাথে আমার সম্পর্ক নাই বললেই চলে, তাই তাদেরকে কথা শুনাইতে চাই নাই। তাছাড়া রাগিব-মেঘমল্লারদের উপর ঐতিহ্যিক ভারটা অনেক বেশি। সেই তুলনায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি তেমন বেশি নয়। তাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চাওয়াটাও তাই অন্যায়।
তবে গতকাল শিক্ষা সংস্কার নিয়ে সলিমুল্লাহ খানের একটা বক্তৃতা শোনার পর মনে হইল, বলা দরকার। ছাত্র ইউনিয়ন জীবিত থাকলে এই বক্তৃতাটা খান ছাত্র ইউনিয়নের কোনও প্রোগ্রামেই দিতেন হয়তো।
লেখক: পারভেজ আলম
গবেষক ও এক্টিভিস্ট
মন্তব্য করুন