সাদিক খান: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি আর তাজমহল দুইটাই কিন্তু একই সময়ে করা। তো, ওদের ধনকুবেররা যখন একের পর এক ইউনিভার্সিটি বানাতে ব্যস্ত ছিলেন, আমাদেরগুলা তখন তাজমহল বা শৌখিন সব উদ্যান বানাতে ব্যস্ত ছিলো। তাও আবার জনগণের ট্যাক্সের টাকা ইউজ করেই। অথচ এক তাজমহলের খরচ দিয়ে কতটা ইউনিভার্সিটি করা যাইতো? হিসাব নাই। ঐ ধারাটা কেন জানি এখনও চলতেসে।
ওয়েস্টের ধনকুবেরদের একটা জিনিস আমার খুব ভালো লাগে। এরা ধন সম্পদ বানায়। তবে সেই সম্পদ দিয়ে এরা নায়ক নায়িকা নাচায় না। এরা মরার আগে আগে সব টাকা পয়সা দান করে দিয়ে চলে যায়।
আমাদের উপমহাদেশের ধনকুবেরদের মধ্যে এই ট্রেন্ড একেবারেই নাই। এই জন্যই দেখবেন, আমেরিকার বহু ইউনিভার্সিটিই ব্যক্তির নামে। বাট বাংলাদেশ বা ভারতে এমন কোনো ধনকুবের দেখাইতে পারবেন, যে নিজের সম্পত্তি দিয়ে একটা ইউনিভার্সিটি বা হাসপাতাল বানাইয়া দিসে? নবাব সলিমুল্লাহ করসিলেন বলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছিল। বাট এরপর আর কেউই করে নাই।
পাক ভারত বা উপমহাদেশের কেউ ধনকুবের হলে অনেকেই খুশি হলেও সত্যি কথা হলো, এই টাকাটা ওয়েস্টের কেউ কামাইলে বরং আপনার লাভ হলেও হতে পারতো। বাট উপমহাদেশের লোকজন এতোটাই স্থুল যে, এরা ছেলেরে সোনার জামা পড়াবে, বাট একটা ইউনিভার্সিটি কখনোই করে দেবে না।
সেদিন এক বিলিয়নিয়ার মহিলা এসে নিজের সমস্ত সম্পদ আইনস্টাইন মেডিকেল স্কুলে দান করে গেলেন। ফলাফল? ঐ ছাত্রদের আর শিক্ষা ঋণ নিয়ে পড়তে হবে না। ওরা ফ্রি পড়তে পারবে। মহিলা চাইলেই হলিউডের নায়ক নায়িকা এনে নাচাইতে পারতেন। বাট ঐটা কয়দিন আর মনে রাখতো মানুষ? তাই তিনি এমন ব্যবস্থা করে গেলেন, এই ডাক্তার ছেলে মেয়েগুলা সারাজীবন এই মহিলারে মনে রাখতে বাধ্য। দোআ করতেও বাধ্য।
আমাদের উপমহাদেশের মানুষ বা কালচার নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই এক ধরণের অহেতুক গর্ব আছে। আর পাশ্চাত্যের প্রতি আছে অহেতুক বিদ্বেষ। অথচ সত্যি কথা হলো, আপনার দেশের বা উপমহাদেশের একশোটা ধনকুবের থাকলে বড়জোর সালমান, শাহরুখের লাভ হবে। আপনার জন্য ফ্রি ওষুধের ব্যবস্থা শেষ মেশ ঐ বিল গেটস বা ওয়ারেন বাফেটের দান করা টাকা থেকেই আসবে।
আপনার দেশের কোনো ধনকুবের আপনার জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করবে না। বরং ওয়েস্টের কোনও ধনকুবেরের দান করে যাওয়া টাকাতেই আপনি হয়তো একদিন পড়তে পারবেন। এবং ওয়েস্টের লোকজনের চিন্তা ভাবনা বলেন আর কাজ কর্মই বলেন, তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মানবিক, অনেক কম স্বার্থপর।।
আলফ্রেড নোবেল শেষ বয়সে নিজের বড় অংশের সম্পদ দিয়ে গেলেন বিজ্ঞান এবং অর্থনীতির জন্য। সেই আলফ্রেড নোবেল যদি এই উপমহাদেশের হতো, তাহলে ছেলের বিয়েতে খরচ করতেন অর্ধেক, মেয়ের বিয়েতে খরচ করতেন অর্ধেক। শেষ বয়সে এসে মসজিদ বা মন্দির করে দিয়ে সমাজসেবক উপাধি নিয়ে মরে যেতেন।
মরার পর ছেলে, বৌ, মেয়ে, মেয়ের জামাই আর ভাই-ভাতিজা মিলে শুরু হতো সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা। মামলা হতো, হামলা হতো। ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি লেগে শেষে মরা বাপরে গালিগালাজ করতো। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ধনকুবেরের মৃত্যুর পরের চিত্র কিন্তু এটাই হয়।
তুলনা করছি না। কে কার টাকায় কী করবে, সেইটা অবশ্যই যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। বাট পার্সোনালি ওয়েস্টের ধনকুবেরদের এই মানবিক দিকটা আমার খুব ভালো লাগে। আমাদের ধনকুবেরদের চিন্তা-ভাবনা ঐ পর্যায়ে উঠতে আর কত হাজার বছর লাগবে, সেটাই এখন দেখার।
লেখক: সাদিক খান
এসআই/
মন্তব্য করুন