এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম এবং আরিফ সোহেলকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার।
নুসরাত তাবাসসুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং কোটা বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। আজ বোরবার (২৮ জুলাই) ভোরে মিরপুরের রূপনগরের বাসা থেকে তাকে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
আর আরিফ সোহেল কোটা সংস্কার আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন।
তার পরিবার জানিয়েছে, শনিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে সাদা পোশাকধারী আট-নয়জনের একটি দল আরিফ সোহেলকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় তারা ডিবি পুলিশের পরিচয় দেয়।
রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন-অর রশীদ নিশ্চিত করেছেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ নুসরাতকে ডিবির হেফাজতে আনা হয়েছে।
তবে আরিফ আরিফ সোহেলের বিষয়টি সাভারের আশুলিয়া থানা কিংবা ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।
নুসরাত তাবাসসুমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তার ফুফাতো বোন মেহের নিগার মিষ্টি বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ভোরে মিরপুরের রূপনগরের যেই বাসা থেকে নুসরাতকে তুলে নেয়া হয়েছে সেখানে পাশাপাশি দুই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন তারা। ভোরে মূল গেইট ভেঙ্গে সাদা পোশাকে একদল ব্যক্তি বিল্ডিংয়ে ঢুকে চার তলার দুইটি ফ্ল্যাটে দরজা ভেঙ্গে ফেলে। তারা নুসরাত ঠিকমতো পোশাক পরিবর্তনের সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি। এক নারীও ছিলো তাদের সাথে। ডিবি পরিচয় দিয়ে তারা নুসরাতকে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, নুসরাতকে বাসা থেকে নেয়ার সময় কোথায় নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে, তারা শুধু মিন্টো রোডে ডিবি অফিসে খোঁজ নেয়ার জন্য বলেছে।
নুসরাত তাবাসসুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী এবং তার ফেসবুক প্রোফাইলে তিনি নিজেকে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির যু্গ্ম সদস্য সচিব এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এবারের কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
আরিফ সোহেলের বাবা মো. আবুল খায়ের বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, রাতে দুটি কালো গ্লাসের মাইক্রোবাসে করে এসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তাদের সবার হাতে অস্ত্র ছিলো। বাড়ির গেটে এসে গেট খুলতে বললো। পরিচয় জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের কথা বলে।
আবুল খায়ের আরো জানান, তারা বললো, আংকেল গেট খুলেন। একটু চা খাবো। আমরা সরকারের লোক। তারপর গেট খুলে দিলে বাড়িতে এসে সার্চ শুরু করে। সবার মোবাইল ফোন জব্দ করে নেয়।
তিনি বলেন, তল্লাশি শেষে তার ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে সাথে করে নিয়ে যায়। সঙ্গে বড় ছেলেকেও নিয়ে যায়। তবে পরে বড় ছেলেকে কিছুদূর এগিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়।
আরিফ সোহেলের পরিবার বিবিসিকে বলেছে, আরিফ সোহেলকে আটকের সময় আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। তবে ভোরেই তারা আশুলিয়া থানায় গেলে সেখান থেকে কাউকে আটকের কথা স্বীকার করা হয়নি। আমরা উদ্বিগ্ন। তাকে কোথায় নেয়া হয়েছে সেটা জানতে পারছি না।
এর আগে শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহকে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের ‘হেফাজতে’ নিয়েছে।
তার আগে শুক্রবার বিকেলে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার’ অভিযোগ উঠে।
এসআই/
মন্তব্য করুন