জবি প্রতিনিধি:
এই মুখ নিয়ে ক্লাসে আসতে পারবেন তো? সারাজীবন নীতি শিখিয়ে আজ নিজেরাই নীতির পক্ষে কথা বলতে ভয় পান। আপনাদের এতো কিসের ভয়? চাকরি হারাবেন? আপনার সন্তান সমতূল্য শিক্ষার্থীরা আজ বিপদের মুখে তাদের পাশে দাঁড়াবেন না? দয়াকরে ক্লাসে আমাদেরকে আর নীতি শেখাবেন না। এভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ( জবি) শিক্ষকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশের প্রায় সকল শিক্ষক, আইনজীবীসহ সকল শ্রেণীর পেশার মানুষ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সমর্থন ও একাত্মতা ঘোষণা করলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষকদের নিরব দশর্কের ভূমিকা পালন করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাদের আশা ছিল সকল শিক্ষক তাদের পাশে থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস নিসা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকদের দেখেই আমরা আদর্শবান মানুষ হই। শিক্ষকেরা আমাদের ক্লাসে আশ্বাস দেন যে আমরা তাদের সন্তানের মতো, যেকোনো পরিস্থিতিতে তাদের কাছে যাওয়া যায়।
কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানে মনে হচ্ছে আমরা অনাথ, মাথার উপর শিক্ষক নেই। নাকি ক্লাসে যা শেখানো হয় সব মিথ্যাচার? নিজের সন্তানের বুকে গুলি লাগলেও কি এভাবে চুপ করে থাকতেন? আপনার একটা আওয়াজ আমাদের কাছে স্বর্গীয় বাণীর মত এখন। আর এখনই আপনারা চুপ? কিসের আশায় এখনো চুপ আপনারা? আপনাদের কাছে এই শিক্ষাই তাহলে গ্রহণ করবো আমরা, যে অন্যায় দেখলে চুপ থাকতে হয় আর রক্ত সম্পর্কের না হলে কেউ আসলে আপন হয়না।
প্রতিটা ক্লাসে দল, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা আপনাদের ভালোবাসতাম, শ্রদ্ধা করতাম।
এরপরও ক্লাসে এসে আমাদের থেকে একই রকম ভালোবাসা আর পাবেন? শুধু আপনাদের পাশে চেয়েছিলাম স্যার!
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকেটিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মুসফিকুর রহমান বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ছিল। এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকার চালিয়েছে গুম, হামলা মামলা এবং নির্মম হত্যাযজ্ঞ। তারই প্রতিবাদে যখন সারাদেশের মানুষ শিক্ষক আইনজীবী শিল্পী ছাত্ররা ফুঁসে উঠেছে, নিজের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করেছে সেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নীরব ভুমিকায় অনড়। তাদের চোখের সামনে থেকে তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে টর্চার করছে অথচ এখনও তাদের বিবেকের উদয় হয়নি। ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে শিক্ষক দাঁড়াতে পারে না আমি তাদের শিক্ষক মানতে নারাজ, আমি তাদের ঘৃণার চোখে দেখি।
আপনারা আর নীরব থাকবেন না দয়া করে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন সত্যের পথে চলুন, বিবেকের কাছে হেরে যাইয়েন না, দেশের কাছে, মনুষ্যত্বের কাছে হেরে যাইয়েন না।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২রা জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এক জরুরি সভা আয়োজন করে। সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। শিক্ষকরা নেতারা চলমান আন্দোলনে সহিংসতায় আহত শিক্ষার্থীদের সু চিকিৎসা এবং নিহত শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত ক্ষতি পূরণ ও পরিবারের যোগ্য সদস্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রদানের দাবি জানায়।
আরএন/
মন্তব্য করুন