শাকিল শাহরিয়ার: আজ (২ এপ্রিল) বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন: শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা।’ বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতি বছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস পালন করে আসছে।
অটিজম বা অটিস্টিক; বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি বহুল আলোচিত শব্দ। শহর থেকে গ্রাম-সব জায়গাতেই এখন কম-বেশি মানুষ এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত। অটিজম সাধারণত বংশগত বা মানসিক রোগ নয়, এটা স্নায়ুগত বা মনোবিকাশজনিত সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজিতে ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার’ বলা হয়ে থাকে।
দেশে প্রতি ৫৮৯ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে (জন্মগত স্নায়ুবিক দুর্বলতা) আক্রান্ত। প্রতি ৪২৩টি ছেলে শিশুর মধ্যে একজন এবং ১ হাজার ২৬ মেয়ে শিশুর মধ্যে অটিজমে আক্রান্ত হচ্ছে একজন। মেয়ের তুলনায় ছেলে শিশু আক্রান্ত হচ্ছে আড়াইগুণ বেশি। শহরে প্রতি ১০ হাজারে ২৫ জন এবং গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪টি শিশু অটিস্টিকে আক্রান্ত হচ্ছে। অটিজমে আক্রান্তের হার মেয়ের চেয়ে ছেলে শিশু আড়াইগুণ বেশি। (তথ্যসূত্র: যুগান্তর)
আমাদের সমাজে অনেক ব্যক্তি বা পরিবার রয়েছেন যাদের অটিজমে আক্রান্ত শিশু রয়েছে। এই শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ।অনেকেই এখনও অটিস্টিক শিশু দেখলে তাদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকেন, তাদের বাবা-মাকে নিয়ে নানাভাবে কুসংস্কারের বলি করা হয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এটা প্রকট! কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তবে আশার বিষয় হচ্ছে বর্তমানে অটিজম নিয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বজুড়েই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সবার মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি একটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। শিশুর জন্মের প্রথম দুই-তিন বছরের মধ্যেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, কোনো শিশুর অটিজম নির্ণয় হলে অতিদ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের সবার সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। শিশুটির সঙ্গে কথা বলার মাঝে, পড়ানোর সময়, সামাজিক বন্ধনে, খেলা-ধুলার মাঝেও বিভিন্ন বিষয় শেখাতে হবে। হাসি-খুশিতে রাখতে হবে সব সময়।
অটিজমের আক্রান্ত শিশুদেরও সঠিক প্রশিক্ষণ দিলে তারা সমাজের কর্মক্ষম ব্যক্তি হিসেবে সম্পদ হয়ে ওঠে। অটিস্টিক শিশুর মধ্যে কোনো না কোনো প্রতিভা বা বিশেষ গুণ লুকিয়ে আছে। নিবিড় পরিচর্যা করলে তারা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। একই সঙ্গে তাদের সুপ্ত গুণাবলীও প্রকাশ পায়।
অটিস্টিক শিশুরা স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করে সফলতা পেয়েছেন। কেউ কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়েও ভালো করছেন, অনেকেই পটু হন গণিতে। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটার, ইন্টারনেটেও অন্য সবার মতোই সমান পারদর্শিতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম।
লেখক: শাকিল শাহরিয়ার
শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
এসআই/
মন্তব্য করুন