রাতুল সাহা, বুটেক্স: বরিশালের শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (সার্সটেক) ১০ম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমাইয়া ইসলাম। নিজের নকশাকে রং তুলির মাধ্যমে বিভিন্ন পোশাকে তুলে ধরেন তিনি। টিউশনির মাত্র ১৫০০ টাকা দিয়ে শুরু করা অনলাইনে হ্যান্ড পেইন্ট থেকে আজকে ‘Bland Glow’ (স্নিগ্ধ চমক) নামক অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবগুলো পণ্য নিয়ে নিজস্ব একটা শো-রুম করা।
উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনের গল্পটা জানতে চাওয়া হলে সুমাইয়া ইসলাম বলেন, করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঘরে না বসে থেকে অনলাইনে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ শুরু করেছিলাম ২০২০ সালের জুলাই থেকে। তা অবশ্য আমার স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে উদ্দেশ্য করেই। আমি বর্তমানে হাত দিয়ে রং তুলির নকশা করা (হ্যান্ড প্রিন্টেড) পোশাক (শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি ইত্যাদি) এবং বিভিন্ন ধরনের ক্রাফটিং এর কাজ, কাঠের গহনা, পাঠের তৈরি ওয়ালমেট, হ্যান্ড পেইন্টেড কেটলি, হারিকেন, মানেহ্যান্ড পেইন্টেড এর ভেরিয়েশন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছি, তাই আমার ছোটবেলার পুতুলের ফ্যাশন ডিজাইনার ভাবনাটাই এখন আমার প্রচণ্ড আবেগ, স্বপ্ন এবং লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুমাইয়া জানান, অনলাইনে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ শুরু করি আমার টিউশনির মাত্র ১৫০০ টাকা দিয়ে। আমি কাজ করছি প্রায় এক বছরের বেশি সময় হলো। মূলত আমার স্বপ্নকে মাথায় রেখেই পড়াশোনার পাশাপাশি আমার করা ডিজাইনটি তুলে ধরছি রং তুলির মাধ্যমে বিভিন্ন পোশাকের উপর। আরো কাজ করছি হ্যান্ড পেইন্ট চশমা ও গহনা নিয়ে। আমার এই ছোট্ট উদ্যোগ যেমনি আমার স্বপ্ন পূরণে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে, তেমনি আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার। কারণ আমি চাকরি করতে চাই না বরং চাকরি দিতে চাই। ভবিষ্যতে নিজেকে আমি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ও একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দেখতে চাই।
তিনি আরো বলেন, Pursue Your Passion: Share Your Expertise; আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে আগাই। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আমি মনে করি লক্ষ্য পরিবর্তনশীল আর তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলেই আপনি জিনিয়াস। যদি চেষ্টা করেন সফলতা আপনার আসবেই হোক সেটা অল্প বয়সে অথবা বৃদ্ধ বয়সে। আর তার প্রমাণ আমরা প্রায়ই দেখি। ছোটবেলায় নিজেকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবতাম। কখনো ডাক্তার (যখন আমি আহত পাখি, হাঁস-মুরগি বা ছোট প্রাণীদের পরিচর্যা করে সুস্থ করে তুলতাম, অসুস্থ আত্মীয়দের সেবা করতাম কিংবা নানাজানকে ইনসুলিন দিয়ে দিতাম) আবার কখনো নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার ভাবতাম (যখন খেলনা গাড়ি, মোটর দিয়ে পাখা নৌকা, লাইট ইত্যাদি বানাতাম) আবার নিজেকে ফ্যাশন ডিজাইনারও ভাবতাম (যখন পুতুলের জন্য সুন্দর ছোট ছোট জামা বানাতাম)। আহা! কত ভাবনাতেই আমি ডুবে ছিলাম।
নিজের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে সুমাইয়া বলেন, আমার ধরাবাঁধা কোনো লক্ষ্য ছিল না বটে কিন্তু ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল বেশি। কিন্তু তা হতে পারলাম কই? মনে হয় আমার সেই প্যাশন, আবেগ ও জেদটাই ছিল না এর প্রতি। তাই হয়তো পূরণ হয়নি। ব্যর্থতা তখন সফল, যখন আমরা তা থেকে কিছু শিখি। আমি এই ক্ষেত্রে কিছুটা সফল কারণ আমি আমার ব্যর্থতা থেকে কিছু শিখতে পেরেছি। সঠিক সিদ্ধান্ত আর নিজের প্যাশনকে খুঁজে পেয়েছি। পাশাপাশি আমি কিছু সংগঠনে কাজ করছি। যেমন সিকেএইচ নেটওয়ার্ক প্লাটফর্মে ক্যাম্পাস এম্বাসেডর হিসেবে এবং নিজের কলেজের সার্সটেক মিডিয়া এন্ড ফটোগ্রাফি, সার্সটেক ডিবেটিং ক্লাব, প্রয়াস ইত্যাদি সংগঠন। আমি আর্ট ও মোটামুটি ক্রাফটিং পারি। ক্ষুদ্র শিক্ষকতার যোগ্যতাও অর্জন করেছি গত দুবছর টিউশন করিয়ে। আর হ্যাঁ! আমি নিজেও এখনো জানতে পারিনি যে আমি কী কী পারি। তা সম্ভবও নয়, তারপরও নিজেকে জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি নিজেকে আরো সফল ভাবে গড়ে তুলতে পারব এবং সফলতার কোমল ঘ্রাণ পাব। সবশেষে এটাই বলতে চাই, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন আমার লক্ষ্য ও স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে পারি।
এসআই/
মন্তব্য করুন