শাকিল শাহরিয়ার: দিনশেষে পাখির যেমন নীড়ে ফেরার তাড়া থাকে, তেমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরও তার ব্যতিক্রম না। পাখিরা আকাশের বুকে ডানা মেলে নীড়ে ফেরে আর বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা তাদের স্বপ্নের রূপালী বাসে চড়ে ফিরে তাদের আবাসস্থলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেধাবীদের একটা স্বপ্নের জায়গা হয়ে উঠেছে বাসগুলো। ভর্তির পরে বাসের ছবি, নাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা টি-শার্ট বানিয়ে পরে, উদযাপন করে স্বপ্ন পূরণের। এমন অকল্পনীয় অনুপ্রেরণার উৎস এই বাস।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের আছে নিজস্ব রঙ। এই বাহ্যিক রূপ তাকে রাস্তার অন্যান্য আর দশটা যানবাহন থেকে করে তোলে স্বতন্ত্র। পথচলতি সাধারণ মানুষের কাছে এর পরিচয় ‘ভার্সিটির বাস’। তবে বিভিন্ন গন্তব্যের বাসের ব্যতিক্রমী ও শ্রুতিমধুর কিছু নামও থাকে এই বাসগুলোর। বশেমুরবিপ্রবির বাসগুলোর আছে সুন্দর কিছু নাম। ছাড়পত্র, বিজয়, মধুমতি, অগ্নিবীণা, মুক্তি, একুশ, রাঙা প্রভাতের মতো অসাধারণ সব নাম। প্রতিটি নামের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের আবেগ ও ভালোবাসা।
গোপালগঞ্জ শহরের মধ্যে চলা এই বাসে শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা স্মৃতি। এই বাসে তৈরি হয় অনেক গল্প, হয় বন্ধুত্ব। বন্ধুরা মিলে দলবেঁধে আড্ডা, গলা ছেড়ে গান আর নানা খুনসুটিতে। যাওয়ার পথটা হয় প্রাণবন্ত। আর এই হাসি-খুশি আর দুঃখ-বেদনাকে সঙ্গী করেই শিক্ষার্থীদের পথচলা। বাসগুলো শিডিউল অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিনিয়ত খুলনা, গোপালগঞ্জ শহর, টুঙ্গিপাড়া, সাতপাড়, কোটালিপাড়া, মুকসুদপুর, কাশিয়ানি পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মচারী নিয়ে যাতায়াত করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নিয়মিত যাতায়াত করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমা বিশ্বাস। তিনি মনে করেন, ক্যাম্পাসের বাসে যাতায়াত করাটা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটু বেশি সুবিধাজনক।
তার অনুভূতির কথায় তিনি বললেন, ‘নিজের ক্যাম্পাসের বাসে যাতায়াত করলে একটা আলাদা গর্ব যেমন কাজ করে, তেমনি একজন নারী হিসেবে এই বাসে আমি অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করি। সে জন্য কখনো কখনো একটু বেশি অপেক্ষা করতে হলে, কিংবা শিডিউল এদিক-ওদিক হয়ে গেলেও ক্যাম্পাসের বাসেই যাতায়াত করতে চেষ্টা করি।’
ইতিহাস বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী আবু হাসনাত রাব্বি জানান কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো।
তিনি বলেন, ‘আমার এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে কতবার যে ফার্মগেটে ভর্তি কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পথে লাল বাসগুলো দেখে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে গিয়েছি! বাসগুলোর দিকে তাকিয়ে শুধু প্রার্থনা করতাম, শিক্ষার্থীর পরিচয়ে এই বাসে চড়ার সৌভাগ্য যেন আমার হয়। সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।’
ক্যাম্পাসের বাসের সুবিধাই সর্বাধিক। নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত হয়। বন্ধু, বড় ভাইবোনদের সঙ্গে একবারের জন্য হলেও প্রতিনিয়ত দেখা হয়। অভিভাবক ও চিন্তামুক্ত থাকেন। রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় না। ভাড়া লাগে না, যদিও সব ফির সঙ্গে এককালীন ফি পরিশোধ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের বাসে সমস্যা তখনই হয়, যখন দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীরা ঝুলে বা দাঁড়িয়ে আসে। ঝুলে আসার সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। তাই যথাসম্ভব বাসে ঝুলে না আসার চেষ্টা করতে হবে। এ ছাড়াও দূরে যেই বাসগুলো চলাচল করে, সেখানে সব শিক্ষার্থীর জন্য আসন নিশ্চিত করতে হবে। একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে কষ্ট হয়। দূরের বাসে শিক্ষার্থী বেশি হয় সপ্তাহের শেষ দিনে, সবাই ভাড়া বাঁচাতে ক্যাম্পাসের বাসে করে বাড়ি যেতে চায়। অনেক বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকে, এগুলোর ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করে চলার উপযোগী করে তুললে শিক্ষার্থীদের কাউকেই দাঁড়িয়ে আসতে হবে না।
এসআই/
মন্তব্য করুন