গবি প্রতিনিধি: অভিনব কায়দায় ডজনখানেক অধ্যাপকদের পদচ্যুতির অভিযোগ উঠেছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) সাবেক রেজিস্ট্রার এস তাসাদ্দেক আহমেদের বিরুদ্ধে।
সাবেক রেজিস্ট্রার তাসাদ্দেক আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি ২০২০ সাল থাকে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই কর্মরত লোকদের চাকরিচ্যুত করে নিজের লোকদের মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি দিয়েছেন। ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়টি সামনে আনায় নানা ধরনের হুমকির মুখে পড়েছেন এবং চাকরিও হারিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং মাঠকর্মী।
সাবেক নিরাপত্তা কর্মী জনাব জয় খান জানান, ২০১৬ সাল থেকে আমি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা কর্মী, মাঠকর্মী, দাফতরিক বিজ্ঞপ্তি লাগানো ও প্রচার, চিঠি আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন কাজ করেছি। ২০২১ সালের ১৭ তারিখে হঠাৎ রেজিস্ট্রার তাসাদ্দেক স্যার আমাকে একটি চিঠি দিয়ে বলেন গণস্বাস্থ্যে চিঠি নিয়ে যেতে এবং এক কপি আমাকে নিয়ে যেতে। গণস্বাস্থ্যে যাওয়ার পর আমাকে বলা হয় কেন আমাকে বদলি করে দেওয়া হলো। আমি তখনও বুঝতে পারিনি কার বদলির কথা বলছে কারণ চিঠি আমি খুলে দেখিনি। কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বদলি করা হবে ভাবিনি। পরে আমাকে জানানো হয় চিঠিতে বদলির কথা উল্লেখ করা। তখন আমি তাকে জানাই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপারভাইজার সিকিউরিটি হিসেবে ছিলাম। কিন্তু দরখাস্তে নিরাপত্তা কর্মী উল্লেখ থাকায় আমাকে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই পদবি নিয়ে আসার জন্য।
তিনি অভিযোগ করে জানান, রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে বদলির আদেশ বাতিল করার জন্য দরখাস্ত করেছিলাম তা প্রত্যাখান করে এবং আমি স্যারকে হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধও করেছিলাম বদলি না করার জন্য। পরবর্তীতে আমি বাধ্য হয়ে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর চাকরি ছেড়ে দিই।
২০ বছর ধরে প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা সৈয়দ আনোয়ার হোসেন জানান, আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে ২০ বছর চাকরি করেছি এবং এর আগে ৩ বছর ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহকর্মী হিসেবে ছিলাম। হঠাৎ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি সাবেক রেজিস্ট্রার এস তাসাদ্দেক আহমেদ স্বাক্ষরিত এক দরখাস্তে আমাকে জানানো হয় চাকুরির অবসর প্রসঙ্গে এবং তা কার্যকর হয় ১ ফেব্রুয়ারি হতে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার কোনো অপরাধ ছিল না। দরখাস্তে আমাকে জানানো হয় ৭২ বছর পূর্ণ হওয়ায় চাকরিতে রাখা যাবে না। কিন্তু আমার মতোই বয়স্ক সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তা এখনও কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়াও অনেক চাকরিজীবীকে তিনি কোনো অভিযোগ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের মোটা অর্থের বিনিময়ে বেআইনীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ক্যাপ্টেন ড. জিয়াউল আহসান বলেন, আমি ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হতে ৩ বছরের জন্য পদার্থ ও রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদে যোগ দান করি। নিয়োগপত্রের ২য় শর্তে বলা হয়েছিল চুক্তির মেয়াদকালের মধ্যে নিজ উদ্যোগে চাকরির মেয়াদ নবায়ন করে নিবেন। এ ব্যাপারে দেড় মাস পূর্বেই সাবেক রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করি তিনি তখন বলেন মেয়াদ শেষ হবার একসপ্তাহ পূর্বে নবায়নের আবেদন করলেই হবে এবং ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর (১ মাস ৮ দিন পূর্বে) নবায়নের জন্য আবেদন করি অথচ চুক্তির শেষ সময়ের একদিন পূর্বে রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয় আমার নিয়োগ নবায়ন করা হয়নি অথচ আমার চাকরির বয়সসীমা এখনো রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দরখাস্তে উল্লেখ করা হয় বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে গেছে এবং এ ব্যাপারে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার উদ্যোগ দেখা যায়নি। আমার নিয়োগপত্রের কোথাও শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর ব্যাপারে কোনো কথা উল্লেখ ছিল না। চুক্তি অনুযায়ী তিন মাসের বেতনও প্রদান করা হয়নি। এ ব্যাপারে আমি বারবার ভিসি স্যারের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের দোহাই দিয়ে কোনো কিছুই জানাননি।
বিভাগ বিভাজনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার নিয়োগের সময় পদার্থ ও রসায়ন বিভাগ একত্রে থাকলেও অবৈধ সুযোগ গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রারের তত্ত্বাবধানে দুটো বিভাগে অর্থাৎ রসায়ন বিভাগ ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ বিভক্ত করা হয়।
জানা যায়, এস তাসাদ্দেক আহমেদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন আরো অনেক অধ্যাপক, সহ অধ্যাপক, সিনিয়র প্রভাষক, প্রভাষক, সহকারী প্রভাষকসহ প্রায় ১৭ শিক্ষক এবং প্রসাশনিক কর্মকর্তা, লাইব্রেরিয়ান, সিকিউরিটি গার্ড, ক্লিনার ইনচার্জ, ড্রাইভারসহ বিভিন্ন পদে থাকা প্রায় ২১ জন কর্মকর্তারা। এছাড়াও তার থাবা থেকে রেহাই পাননি বিশ্বসেরা অণুজীব বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীলও।
এ ব্যাপারে সদ্য সাবেক রেজিস্ট্রার এস তাসাদ্দেক আহমেদ জানান, রেজিস্ট্রার এডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান নিয়োগের ব্যবহারে তার কোনো ক্ষমতাই নাই। তাহলে কিভাবে কাউকে চাকুরি দেওয়া বা চাকরিচ্যুত করার দায় আমার হতে পারে! নিয়োগের ক্ষেত্রে ট্রাস্টির ৩জন সহ ভিসিও থাকেন উনারা এপ্রুভ করার পরে আমি কাগজে সই দিতে পারি এতটুকুই আমার দায়িত্ব। আর ট্রাস্টিবোর্ডের নির্দেশ ছাড়া কখনোই কোনো নিয়োগ বা বাতিলের এখতিয়ার রেজিস্ট্রার রাখেনা। ব্যাপার টা অবান্তর।
উল্লেখ্য, এস তাসাদ্দেক আহমেদ ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রি দেখিয়ে চাকরি নিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১২ আগস্ট তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ দেয় এবং ওই নিয়োগপত্রে তার নামের আগে ‘ডক্টর’ লেখা দেখা যায়। তবে ভুয়া ডিগ্রির অভিযোগ ক্রমশ ছড়িয়ে যাওয়ায় নামের আগে ড. লেখা বন্ধ করেন এবং ইউজিসি’র ওয়েবসাইটেও তার নামের আগে ড. পদবি মুছে ফেলা হয়েছে।
এসএস/
মন্তব্য করুন