বাকৃবি প্রতিনিধি:
৪ আগস্ট রাজধানীর মতো শেরপুর জেলাতেও কোটা সংস্কারের আন্দোলনের উত্তেজনায় উত্তপ্ত। শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ মিছিল নিয়ে শেরপুর সদরের খরমপুর মোড়ে জড়ো হচ্ছিলেন। এমন সময় দুবৃত্তের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী । যাদের মধ্যে শহীদ হন সবুজ। পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায়
আজ তার পরিবারের অবস্থা দুর্বিষহ।
সোমবার (৫ আগস্ট) ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে জন্ম নেয় নতুন বাংলাদেশ। সবার মুখে হাসি, অথচ শহীদ জননী সবুজের মায়ের মুখে হাসি নেই। চোখের কোণে ভেসে আসছে অবিরাম অশ্রু। ভোর থেকে তিনি ঘরের দোয়ারে বসে আছেন। কখন ছেলে আসবে, “মা” বলে ডাকবে, ভাত খেয়ে আবার চলে যাবে কলেজে। বাবা, আজহার আলী পাঁচ বছর যাবৎ প্যারালাইজড। বিছানায় শুয়ে সবুজের জন্য ছটফট করছেন । কখন ছেলে ওষুধ নিয়ে আসবে? বাবা, ওষুধ খেয়েছে কি না খবর নিবে? ছোট ভাইবোনের পড়াশোনার এবং পরিবারের খরচ চলত সবুজের উপার্জিত অর্থে। এখন সে নেই। কে নেবে তাদের ভালো মন্দের খবর?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক কাপড়ে কাটছে পরিবারের সদ্যসদের দিনকাল। বাবার ওষধের খালি বাক্স পড়ে আছে মেজের উপর। সাহায্য পেলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। তার মধ্যে ছবি তোলার বিড়ম্বনায় বিরক্ত পরিবারের সদ্যসরা। ভিটাশূন্য এই পরিবার অন্যের জমিতে ত্রেভাগায় ফসল ফলিয়ে কোনভাবে চলত দিনকাল।
সবুজের স্বপ্ন ছিল বড় ডাক্তার হবে। গ্রামের লোকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করবে। মা-বাবাকে শহরের বড় হাসপাতালে চিকিৎসা করাবে। ভালো রাখবে। আজ সবুজ বেঁচে থাকলে আমাদের রুটিরুজির কোনো চিন্তা করতে হতো না, এমনটাই জানান শহীদ সবুজের মা শমেজা বেগম।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে হাসিনা কেন কাইড়া নিলে? তোরে তো ভোটও দিছিছিলাম। মরে যাওয়ার আগে আমার ছেলেকে যারা মারছে, তাদের ফাঁসি দেখতে চাই। আমার বাকি সন্তানদের সরকারি চাকরির ব্যবস্থার জন্য সরকার পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
শমেজা বেগম আরও জানান, সবুজকে ধার দেনা করে পড়িয়েছি। যে সামান্য অর্থ সাহায্য পেয়েছিলাম তা দিয়ে পাওনাধারীদের বকেয়া পরিশোধ করতে হয়েছে। সবুজের টাকায় চলত ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা। এখন সে তো আর নেই। কে দিবে তাদের পড়ালেখার খরচ?
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের রূপারপাড়া গ্রামের আজহার আলীর ছেলে সবুজ। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবুজ ছিলেন দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ের পরেই বাবা প্যারালাইজড হন। সবুজের আয়েই চলত পাঁচ সদস্যের পরিবার। প্রতিভাবান এই কিশোর শ্রীবরদী সরকারি কলেজের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। এবারের ময়মনসিংহ বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪ দশমিক ৩৩ পেয়েছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে পার্টটাইম কাজ করতেন। যার আয়ে চলত তার পরিবার।
শ্রীবরদী সরকারি কলেজের শিক্ষকবৃন্দ জানান, মেধাবী এই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। দুবৃত্তদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সাহায্যের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট ভাইবোনদের উচ্চ শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের বিশেষ নজর দিতে হবে।
এএকে/
মন্তব্য করুন