রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক ‘সমন্বয়ককে’ হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দুই দফায় তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। পিটুনির শিকার হয়ে একটি রিকশা নিয়ে তিনি নিজেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন।
আহত এই ছাত্র সমন্বয়কের নাম সোহেল রানা। তিনি রাজশাহী কলেজের ছাত্র। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী কলেজের কোনো সমন্বয়ক পরিষদ ছিল না। তবে আন্দোলনের সময় এই কলেজের যেসব ছাত্র নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিলেন, তাঁরা নিজেদের ‘রাজশাহীর সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। আহত সোহেল রানা তেমনই একজন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজনির্ভর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা এখন ভেতরে–ভেতরে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সোহেল রানা যে পক্ষে রয়েছেন, সেই পক্ষটি বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় এক সমন্বয়ককে রাজশাহীতে এনে স্থানীয় কমিটি করার চেষ্টা করেছিল।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর সমন্বয়ক আবদুর রহিম বলেন, ‘আজ একটা গ্রুপ কেন্দ্রের একজন ভুয়া সমন্বয়ককে এনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর কমিটি করার চেষ্টা করেছিল। ওই ভুয়া কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের বাড়ি রাজশাহী, তিনি ঢাকার একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ওই ভুয়া সমন্বয়ককে গণপিটুনি দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন। পরে সোহেলের ওপর কারা হামলা করল, সেটা আমি জানি না।’
তবে ছাত্র আন্দোলনকারীদের সামনের সারির একজন ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা থেকে তিনজন সমন্বয়ক এসেছিলেন রাজশাহীর আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য। তাঁরা ভুয়া নন। তাঁরা রাজশাহীতে এসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের জানিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল খেলা রয়েছে বলে তাঁরা পরে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি অংশের কয়েকজন ছাত্র এসে তাদের সঙ্গে বাদানুবাদ শুরু করে। তাদের পিছু পিছু আসে ছাত্রদল।
তবে যাঁরা প্রথমে বিশৃঙ্খলা করেছেন, তাঁরা ‘বহিরাগত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আহত সোহেল রানা। তিনি বলেন, প্রথমে ‘বহিরাগতরাই’ বিশৃঙ্খলা করে। পরে ছাত্রদল হামলা করে তাঁর ওপরে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহেল রানা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহীর পক্ষ থেকে বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। পরে সেটি কালেক্টরেট মাঠে নেওয়া হয়। ওই মাঠে গিয়ে তিনি আঁচ করেন, রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের কিছু নেতা–কর্মী তাঁকে ‘টার্গেট’ করছেন।
হামলার আশঙ্কায় মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন উল্লেখ করে সোহেল রানা বলেন, তখন তাঁকে কয়েকজন মিলে মারধর করেন। এরপর তিনি একটি রিকশা নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। আরেক দফা হামলার আশঙ্কায় তিনি বিকল্প পথেই হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। তখন রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পাশে তাঁকে আবারও রিকশা থেকে নামিয়ে ২০-২৫ জন ছাত্রদল নেতা–কর্মী তাকে পিটুনি দেন। হাতুড়ি ও বাঁশ দিয়ে তাঁকে ইচ্ছেমতো পেটানোর পর হামলাকারীরা চলে যান। রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের জয়, রুহুল আমিনসহ ২০-২৫ জন তাঁকে পিটিয়েছেন বলে অভিযোগ সোহেল রানার।
জানতে চাইলে কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, মূলত সমন্বয়কদের দুই পক্ষের মধ্যে একটু গন্ডগোল হয়েছে। সোহেলের ওপর হামলাকারী হিসেবে ছাত্রদল বলা হচ্ছে, আন্দোলনের সময় তো ছাত্রদলও ছিল। ছাত্রদল এখন পরে, আগে ওরা (হামলায় জড়িতরা) সমন্বয়ক।’ তিনি বলেন, ‘এই ছেলেটা (সোহেল) আগে জাসদ ছাত্রলীগ করত। পরে সমন্বয়ক হয়ে গেছে। সে সুবিধাবাদী। এ জন্য তার ওপর আক্রমণ হয়েছে বলে শুনেছি।’
তবে রাজশাহী জেলা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হোসেন আলী জানান, সোহেল রানা তাঁদের সংগঠনের ছাত্র শাখার সমন্বয়ক।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস জানান, সমন্বয়ক সোহেল রানার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। তাঁকে হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁর চিকিৎসা করা হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। একজন হালকা আহত বলে শুনেছি। আমরা বিষয়টা দেখছি।’
(দৈনিক প্রথম আলো’র প্রতিবেদন, এডুকেশন টাইমস’র পাঠকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করায় তুলে ধরা হল)
এসআই/
মন্তব্য করুন