ডেস্ক রিপোর্ট:
কোটা আন্দোলন নিয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
(১৭ জুলাই) বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে তিনি জানিয়েছেন এই আন্দোলকে তিনি যেভাবে দেখছেন।
‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ নির্মাতা লিখেছেন, ‘আপনারা যারা ভাবছেন আন্দোলনটা স্রেফ একটা চাকরির জন্য, তারা বোকার স্বর্গে আছেন। আপনারা এর সবগুলা শ্লোগান খেয়াল করেন। দেখবেন, এই আন্দোলন নাগরিকের সমমর্যাদার জন্য। এই আন্দোলন নিজের দেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে না বাঁচার জন্য। এই আন্দোলন রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আছেন, তাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, দেশের মালিক তারা না, আসল মালিক জনগন। সেই জনগনকে রাষ্ট্র যে পাত্তা দেয় না, এই আন্দোলন সেটার বিরুদ্ধেও একটা বার্তা। রাষ্ট্র জনগণকে কেন পাত্তা দেয় না, এই আন্দোলনকারীরা সেটাও বোঝে। যে কারণে ভোটের বিষয়টাও শ্লোগান আকারে শুনেছি। আমি এটাকে এইভাবেই পাঠ করছি।’
এই নির্মাতা আরও লিখেছে, ‘পাবলিক সারভেন্ট শব্দটা বেশ ভালো। নির্বাচিত (!) প্রতিনিধি বা যে কোনো সরকারি বেতনভুক্ত ব্যক্তিকে এই শব্দেই ডাকা উচিত সবসময়। এই আন্দোলন সেই পাবলিক সারভেন্টদের মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আপনি আমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। অল পাওয়ার টু দ্য পিপল। অল পাওয়ার টু দ্য ইয়ুথ। প্রেয়ারস ফর মাই ফেলো সিটিজেনস। শহীদের রক্ত কখনো বিফলে যায় না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া আবু সাইদের একটি সাদা-কালো ছবিসহ তিনি এই আন্দোলনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেছেন, ‘এই যে এত লম্বা লেখাটা লিখলাম, এটা আসলে আমি লিখিনি। আমি মুখে বলেছি, একজন ট্রান্সক্রাইব করে দিয়েছে। যারা আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন, তারা জানেন যে আমি শারীরিকভাবে এখনো পুরোপুরি সুস্থ না। ফলে আমার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত। কোটা আন্দোলন নিয়ে আমি কিছুদিন আগে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে সরিয়ে ফেলেছি। কারণ, একটা স্ট্যাটাস দিলে আমার মাথার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরবর্তীতে আরেকটা কথা লিখতে ইচ্ছা হয়। এবং লিখতে থাকলে যত বেশি এংগেজড হই, সেটা আমার শারীরিক অবস্থার জন্য ভালো না। আমার শরীর সুস্থ করার জন্য যে লড়াইটা, সেটা এক দীর্ঘ লড়াই। সেই লড়াইটা করার অনুমতি নিশ্চয়ই পেতে পারি?’
আক্ষেপ নিয়ে ‘শনিবার বিকেল’ নির্মাতা লিখেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমার স্ট্যাটাসটা সরিয়ে ফেলার পর থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে লিখেছেন যে, আমি দালাল হয়ে গেছি, এই কারণে চুপ হয়ে আছি। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার বিপদ হচ্ছে, আপনাকে প্রতিদিন প্রমাণ করতে হবে আপনি কে! আজ রাষ্ট্র যে অবস্থায় এসেছে, এ অবস্থায় আসার শুরু যখন হয়েছিল, তখন থেকে তারা যদি আমার ফেসবুকের লেখাগুলো একটু গবেষণা করে দেখতো, তাহলে বুঝতে পারত আমি কে, আমি কী বলেছি। এবং কী বলার কারণে আমি বারবার বিপদে পড়ি। কোন রিসার্চ নাই, জাস্ট ঢালাওভাবে দালাল বলে দাও। আজ যে বাইনারি চলছে, হয় তুমি আমার পক্ষে, না হয় তুমি আমার বিপক্ষে। এই বাইনারির বিপক্ষে আমি ২০১৪ সালে একটা লেখা লিখেছিলাম “কিন্তু এবং যদির খোঁজে”, বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছিল। মনে রাখতে হবে, ওই সময় ছিল শাহবাগের সময়। ২০১৩ তে যখন শাহবাগে আন্দোলন শুরু হলো তখন, বাইনারি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে, বলতে শুরু হল “কিন্তু এবং যদি” যে বলবে, সেই রাজাকার, সেই ছাগু। সেই ছাগু ট্যাগটাকে আমি গলার মালা হিসেবে নিয়ে লিখেছিলাম “কিন্তু এবং যদির খোঁজে”। কিছুদিন আগেও আমি বলেছি, স্বাধীনতাকে প্রশ্ন করতে পারাটাই স্বাধীনতা!’
আরএন/
মন্তব্য করুন