তাফসির বাবু: ভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে তখন। আমেরিকা থেকে ৩ জন স্টুডেন্ট আসলো আমাদের ইউনিভার্সিটিতে। একটা সামাজিক এনজিও’র পক্ষ থেকে। দুইজন মেয়ে, একজন ছেলে। উদ্দেশ্য সিলেকটেড কিছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে চারদিনের একটা ট্রেনিং ক্যাম্প করানো।
আমেরিকার এই তিনজনই ছিলো আমাদের এক বছর জুনিয়র। মাস খানেক পরেই সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে। যাই হোক, তারা আমাদের ট্রেইনার। এসেছে বাংলাদেশে। কিন্তু ওরা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানে না।
সেই বছর ডক্টর ইউনুস নোবেল পেয়েছেন। আমরা মহাউৎসাহে তার কথা বললাম। চেনে না। এমনকি দুইজন তো বললো, নোবেল পুরস্কারের কথাও নাকি শোনেনি কখনও। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও দেখলাম, বলা যায় কিছুই জানে না। অথচ তারা আমাদের ট্রেইনার। যদিও তাদের ট্রেনিংয়ের বিষয় ভিন্ন।
কিন্তু যেহেতু তারাও শিক্ষার্থী তাই গল্প-আলোচনা চালিয়ে নিতে এসব বিষয়ের অবতারণা করেছিলাম সেই কয়েকদিনে বিভিন্ন সময়। পরে বুঝলাম, তারা আসলে আমাদের মতো সবজান্তা শমশের না। যে যেটা জানে, সেটা খুব ভালোভাবে জানে। সেখানে সে ওয়ার্ল্ড ক্লাস।
কে, কোন বিষয়ে নোবেল পেলো, ইরাক যুদ্ধ কবে শুরু হলো- এসব বিষয় এই সময়ে তাদের জানার কোন প্রয়োজন নেই আসলে। কিন্তু আমরা ভিন্ন। এমন এমন বিষয় জানতে হয়, মুখস্ত করতে হয়, পড়তে হয় বাস্তবে যেটা খুব একটা কাজে আসে না। ঐ বয়সে তো কোনো দরকারই নেই সেসব জানার। আমেরিকানরা এটা বোঝে যে কখন, কোনটা জানতে হয়।
অথচ আমাদের এখানে দেখেন। এই যেমন আমরা এখন লাগছি বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছাত্রের পেছনে। সে কেন নাটক দেখে না, প্রেম করে না, সিনেমা দেখে না- এসব নিয়ে কত্তো প্রশ্ন!
আরে শালা, সবার এই বয়সে সব কিছু করার দরকার নাই। ভর্তি পরীক্ষার কয়েকটা মাস সে সিনেমা দেখে কী করবে? বরং সে তার লক্ষ্যে ফোকাসড। সেটাই হওয়া উচিত। সে বৈশ্বিক কোনো একটা টেক কোম্পানিতে চাকরি করতে চায়, এটাও তার চয়েস। ন্যারো দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মনে হতেই পারে যে চাকরি করা কেন একজন তরুণের লক্ষ্য হবে।
কিন্তু ভেবে দেখুন, এই লক্ষ্য না থাকলে সে কী করতো? সিনেমা দেখে, নাটক করে, প্রেম করে তারপর কবি হয়ে যেতো হয়তো। অথবা কোন বুদ্ধিজীবী! আমরা চাকরিতে আটকাইতে চাই না জন্যেই তো দেশে এতো কবি আর বুদ্ধিজীবী আর দেশপ্রেমিক!
আরে ভাই, আগে গুগল-মাইক্রোসফট-মেটা’তে ইন্ডিয়ানদের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে চাকরি নে। তারপর না মালিক হবি, উদ্যোক্তা হবি, ইনফ্লুয়েন্সার হবি, দেশ উদ্ধার করবি। নিজের কাজ ঠিক মতো করাটাই কিন্তু দেশপ্রেম।
লেখা: বিবিসি বাংলা’র সাংবাদিক তাফসির বাবুর ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া
মন্তব্য করুন